কিয়েভে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের তিন বছর পর ইউক্রেন সরকারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এল। দেশটিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
৩৯ বছর বয়সী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কো ইউক্রেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি ডেনিস শ্যামিহালের স্থলাভিষিক্ত হলেন। শ্যামিহাল ২০২০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর সিভিরিদেঙ্কো এ পদে আসীন হলেন।
এর আগে সিভিরিদেঙ্কো উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব দায়িত্ব পালনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। চলতি বছর ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি স্বাক্ষরেও তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে প্রাথমিক শীতল সম্পর্ক কাটাতে সাহায্য করে।
সিভিরিদেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানো, সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি ও অর্থনীতিকে সহায়তা করার ওপর গুরুত্ব দেবেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আমাদের সরকার এমন একটি ইউক্রেন গড়ার পথে এগোচ্ছে, যা নিজস্ব সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তির ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমার মূল লক্ষ্য, এমন বাস্তব ও ইতিবাচক ফলাফল, যা প্রতিটি ইউক্রেনীয় নাগরিক তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে অনুভব করবেন। যুদ্ধের কারণে আমাদের কোনো বিলম্বের (দায়িত্ব পালনে) সুযোগ নেই—আমাদের দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।’
পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী ৪৯ বছর বয়সী শ্যামিহাল এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন। এই মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিয়ি সিবিহা (৫০) তাঁর পদে বহাল থাকছেন। তবে জেলেনস্কি বিদায়ী আইনমন্ত্রী ওলহা স্তেফানিশিনাকে (৩৯) যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর নিয়োগ ওয়াশিংটনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে স্তেফানিশিনার। তিনিও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক খনিজ সম্পদ চুক্তির আলোচনায় ভূমিকা রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের বর্তমান রাষ্ট্রদূত ওক্সানা মার্কারোভা বিদায় নিচ্ছেন। তাঁর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন তিনি।
গত সপ্তাহে কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলেনস্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইছিলেন। তবে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্লাভ ঝেলেজনিয়াকের দাবি, ওয়াশিংটন তাঁর মনোনয়ন অনুমোদন করেনি।
অন্যান্য পরিবর্তনের মধ্যে উপমন্ত্রী ওলেক্সি সোবোলেভ ও তারাস কাচকা যথাক্রমে অর্থনীতি, পরিবেশ ও কৃষিমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় সংযুক্তিকরণবিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
তবে এ রদবদলের পরও সরকার সমালোচকেরা বলছেন, মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ দেখা গেলেও অনেকে আগের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবেই রয়ে গেছেন। সমালোচকদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজের অনুগতদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করে সরকারে নিজের ক্ষমতা আরও সংহত করছেন।