ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান তেহরানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছে তথ্য চেয়েছে ইরান। শুক্রবার তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ইরানের জাতীয় বিমান চলাচল বিভাগের প্রধান আলী আবেদজাদেহ।
পশ্চিমা নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান এবং এর কয়েক ঘণ্টা পরই তেহরানের কাছে ইউক্রেনের একটি বিমান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়। তবে এই হামলা ‘অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকতে পারে’।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসভির বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইউক্রেন ও বিমান প্রতিষ্ঠান বোয়িংসহ ওই বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যেসব দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছেন সেসব দেশের বিশেষজ্ঞদের তদন্তকাজে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে ইরান।’
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সব প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে ইরানি একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেনের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে এবং এই হামলা ‘অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকতে পারে’।
ট্রুডো বলেন, আমাদের মিত্র, নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া প্রমাণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ইরানের একটি সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ইউক্রেনের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা উৎসের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
ইরানের অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও।
এর আগে ইরানের রাজধানী থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৬৩ জন কানাডার নাগরিক ছিলেন বলে জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
দুর্ঘটনার বিষয়ে ইরানের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বুধবার বলেন, তেহরানের কাছে ওই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা সব আরোহী নিহত হয়েছেন এবং এই দুর্ঘটনার বিষয়ে ইরান নেতৃত্বাধীন তদন্তকাজে অংশ নেয়ার জন্য কানাডা সরকার তেহরানকে চাপ দিচ্ছে।
তবে ২০১২ সালে ইরানে অবস্থিত কানাডা দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া এবং তেহরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার ফলে তাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়া কঠিন হবে বলেও জানান ট্রুডো।
ইরান ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরই ইউক্রেন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটির কারণেই সাড়ে তিন বছরের পুরোনো বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন ইরানি কর্মকর্তারা।
ইরানি কর্মকর্তাদের দেয়া বিবৃতির সাথে প্রাথমিকভাবে একমত পোষণ করলেও, তদন্ত শেষ না হওয়ায় নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশে ইউক্রেনের ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।