ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ২ নভেম্বর, এইউজেডনিউজ২৪: ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর এসেক্সের একটি লরি কনটেইনার (মালবাহী ট্রাক) থেকে উদ্ধার করা ৩৯টি লাশই ভিয়েতনামের নাগরিকদের। পুলিশ গতকাল শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে লন্ডনের মধ্যাঞ্চল থেকে ২০ মাইল দূরে এসেক্সের গ্রেস শহরের শিল্প এলাকায় একটি রেফ্রিজারেটেড লরির কনটেইনার থেকে ৩৯টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। প্রাথমিকভাবে তাঁরা চীনের নাগরিক বলে ধারণা করছিল পুলিশ।
এসেক্স পুলিশ জানিয়েছে, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি পরিবারসহ ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে লাশগুলো ভিয়েতনামের নাগরিকদের।
লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর যুক্তরাজ্যে ভিয়েতনামি সম্প্রদায়ের একটি সংগঠন ভিয়েতহোম বলেছে, অন্তত ২০টি পরিবারের কাছ থেকে আত্মীয় নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছে তারা।
ভিয়েতনামভিত্তিক নাগরিক নেটওয়ার্ক হিউম্যান রাইটস স্পেসের কর্মকর্তা হোয়া নিয়েম জানান, ২৬ বছর বয়সী ফাম ট্রা মাই মায়ের উদ্দেশে একটি বার্তা লিখে রেখে গেছেন। লরিটি যখন বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিল, তখন তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না বলে লিখেছেন। বার্তাটিতে লেখা ছিল, ‘মা-বাবা, আমি দুঃখিত। আমার বিদেশযাত্রা সফল হয়নি। আমি তোমাদের দুজনকে খুব ভালোবাসি। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমি ভিয়েতনামের ক্যান লোক এলাকার নেন টাউন থেকে এসেছি…আমি দুঃখিত, মা।’
জানানো হয়েছে, সহকারী প্রধান কনস্টেবল টিম স্মিথ বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে, আমাদের ধারণা মারা যাওয়া ব্যক্তিরা ভিয়েতনামের নাগরিক। আমরা ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’ তিনি বলেন, পুলিশ মারা যাওয়া কাউকে শনাক্ত করার মতো অবস্থানে নেই।
লন্ডনে ভিয়েতনামি দূতাবাসের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি তাঁরা আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করা দরকার। ভিয়েতনাম ও যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রিয়জনদের লাশ বাড়ি ফিরিয়ে আনতে তাঁরা ভিয়েতনাম ও যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে ইচ্ছুক। ভিয়েতনামি কৃষক ৩০ বছর বয়সী লে ভ্যান হার বাবা বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে মৃত লোকজনের মধ্যে তাঁর ছেলেও রয়েছেন। এর আগে ভিয়েতনামের হা টিনহ প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছিল, তারা অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অভিবাসন পরিচালনার বা দালালি করার’ অভিযোগ এনেছে।
এ ঘটনায় লরির চালক মরিস রবিনসনকে ওই দিনই গ্রেপ্তার করা হয়। এক্সেস পুলিশ বলেছে, লরির ওই চালকের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অভিবাসন ও অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। গত সপ্তাহে পুলিশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের ওয়ারিংটনে ৩৮ বছর বয়সী এক পুরুষ ও এক নারী এবং লন্ডনের স্টানস্টেড বিমানবন্দর থেকে ৪৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করে। মানব পাচার ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাঁদের আটক করা হয়।
পুলিশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের নাগরিক দুই ভাই রোনান ও ক্রিস্টোফার হিউজেসকেও খুঁজছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড এবং মানব পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো ও দেশে বিদেশে