এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে ফল বিপর্যয় ঘটেছে। যার প্রভাব পড়েছে বোর্ডের গোটা পাসের হার ও জিপিএ–৫ প্রাপ্তিতে।
২৪টি বিষয়ের মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার সবচেয়ে কম। এ বিষয়ে এই বোর্ড পাসের হার ৫৪ দশমিক ৮২। এ কারণে এ বছর যশোর বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৫ শিক্ষার্থী। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী।
গত বছর ১ লাখ ২২ হাজার ৫১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছিলেন ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৭৪৯ জন।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোসাম্মৎ আসমা বেগম এটাকে ফল বিপর্যয় বলতে চান না। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিপর্যয় বলতে চাই না। এটাই অরিজিনাল ফলাফল। শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ফল পেয়েছে। তবে আমরা এই ফলাফলে সন্তুষ্ট নই। আমরা আশা করেছিলাম, শিক্ষার্থীরা আরও ভালো ফল করবে। কিন্তু ইংরেজি বিষয়ে তারা বেশি ভালো করতে পারেনি। যার প্রভাব পড়েছে বোর্ডের গোটা ফলাফলে।’
ফলাফলের বিষয়ে যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক শংকর দত্ত বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজিতে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের দক্ষতা একেবারেই কম। মুখস্ত বিদ্যায় শিক্ষকেরা খুশি হন না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা নম্বর কম পাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নিজে থেকে ইংরেজি লেখা বা সৃজনশীলতায় ঘাটতি আছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘ইংরেজি বিষয়ে ফল বিপর্যয়ের জন্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত আমরা কেউ এর দায় এড়াতে পারি না। শিক্ষার্থীদের মৌলিক ভিত শক্ত হচ্ছে না।’
ইংরেজি বিষয়ে এত খারাপ ফল করার কারণ জানতে চাইলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল মতিন বলেন, স্কুল-কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ঠিকমতো হচ্ছে না। এ কারণে অন্য বিষয়ের শিক্ষকেরাও ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে।
ইংরেজির পাশাপাশি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতেও তুলনামূলক ভালো ফল করতে পারেননি। যে কারণে জিপিএ–৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমে গেছে। এ বছর পদার্থে ৮১ দশমিক ৭০, রসায়নে ৮৫ দশমিক ১৩ ও উচ্চতর গণিতে ৭৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘শিক্ষকেরা কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমরা জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ করার বিষয়ে বলব। এ ছাড়া জেলায় জেলায় সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষক ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে।’