তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। এটি টাইগারদের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটিও এই সিলেটে ছিল। তবে প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ২০২০ সালের সেই ম্যাচে ১৬৯ রানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় খেলতে নামে দুদল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটাই সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহামে সেবার অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১ রান তাড়া করতে নেমে এই সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ।
advertisement
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের দাপটে ৩০.৫ ওভারে মাত্র ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
৩৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা আয়ারল্যান্ড যদিও দারুণ শুরু পায়। উদ্বোধনী জুটিতে ১১.২ ওভারে ৬০ রান তোলেন দুই ওপেনার স্টেফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং। তবে এরপর সাকিব আল হাসানের ব্রেকথ্রুর পর জোড়া আঘাত করেন এবাদত হোসেন। দলীয় ৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় সফরকারীরা। ডোহেনিকে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে ফেরান সাকিব। এই ব্যাটার ৩৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন।
advertisement
১৩তম ওভারে আরেক ওপেনার স্টার্লিংকে ব্যক্তিগত ২২ রানে সেই মুশফিকের ক্যাচে আউট করেন এবাদত। নিজের পরের ওভারে ফের এবাদতের আঘাত। এবার হ্যারি টেক্টরকে (৩) বিদায় করেন। ক্যাচ নেন মুশফিক। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড ১৬তম ওভারে ফের চোট পায়। এবার তাসকিন আহমেদ সরাসরি বোল্ড করেন দলটির অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নিকে (৫)।
লোরকান টাকারকে স্লিপে থাকা ইয়াসিরের দারুণ ক্যাচে ফেরান তাসকিন। এরপর নাসুম আহমেদের টানা ৩ উইকেট দখলে চূড়ান্ত চাপে পড়ে সফরকারী দলটি। বাঁহাতি এই স্পিনার কার্টিস ক্যাম্ফার, গ্যারেথ ডেলানি ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে ফেরান। শেষ দুটি উইকেট তুলে নেন এবাদত।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন এবাদত। ৩টি উইকেট দখল করেন নাসুম আহমেদ। এছাড়া তাসকিন দুটি ও সাকিব একটি উইকেট পান।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ব্যক্তিগত ৩ রানে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে আউট হন। এরপর দলীয় ৪৯ রানে আরেক ওপেনার লিটন দাস ফেরেন। কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ২৬ রান করা এই ডানহাতি পল স্টার্লিংকে ক্যাচ দেন। আর ২৫ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রিনের বলে বোল্ড হন।
দলীয় ৩৮তম ওভারে নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হন সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত ব্যাট করা এই তারকা ৮৯ বলে ব্যক্তিগত ৯৩ রানে গ্রাহাম হিউমের শিকার হন। ৫৩তম ফিফটি পাওয়া এই তারকা ৯টি চার হাঁকিয়েছেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তিনি তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ১২৫ বলে ১৩৫ রান তোলেন।
যদিও তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছালেন সাকিব। ২০তম ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে মিড অফে সিঙ্গেল নিয়ে এই কীর্তি গড়েন তিনি। পাশাপাশি ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের ‘ডাবল’ও হয়ে গেছে সাকিবের। আর এই ডাবলে সাকিবই দ্রুততম। তিনি পেছনে ফেলেন শ্রীলংকান কিংবদন্তি সনাৎ জয়াসুরিয়া ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকে।
৪৬তম ওভারে মুশফিকুর রহিম ও তৌহিদ হৃদয় আউট হন। যেখানে অভিষেকে দারুণ ব্যাটিং করলেও নড়বড়ে নব্বইয়ে বিদায় নিয়েছেন হৃদয়। তিনি গ্রাহামের বলে ৮৫ বলে ৯২ করে বোল্ড হন। ৮টি চার ও ২ ছক্কা হাঁকান এই ডানহাতি। একই ওভারে এর আগে মুশফিক ২৬ বলে সমান ৩টি চার ও ছক্কায় ৪৪ করে মাঠ ছাড়েন। এই দুজন জুটি গড়ে ৪৯ বলে ৮০ রান তোলেন।
হিউমের চতুর্থ শিকার হওয়া তাসকিন আহমেদ ৭ বলে এক ছক্কায় ১১ রান করেন। আর শেষ ওভারে ইয়াসির আলী ১০ বলে ১৭ করে রান আউট হন।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট পান হিউম। একটি করে উইকেট পান অ্যাডায়ার, ম্যাকব্রিন ও ক্যাম্ফার।