অভ্যন্তরণী নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। খেলোয়াড়রা ঠিকমতো বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। যে কারণে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফুটবল লিগের ম্যাচে মাঠেই নামতে চাননি বিখ্যাত সাদা-কালো জার্সিধারীদের ফুটবলাররা! কিন্তু শেষমেশ দলের সম্মান আর সমর্থকদের ভালোবাসার মূল্য দিয়ে ঠিকই ময়দানি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। আর তাতেই মৌসুমের প্রথম ‘ঢাকা ডার্বি’ তথা আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ উপভোগ করেন ফুটবলপ্রেমীরা।
খেলাপ্রেমী মানেই জানেন, মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ মানেই বাড়তি রোমাঞ্চ আর উত্তাপ। সেটা দেখা গেছে সোমবারের ম্যাচেও। কুমিল্লার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে উপভোগ্য ও উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে গোল হয়েছে ৫টি। ম্যাচের প্রথমার্ধেই দুই গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। বিরতির পর আবারো আবাহনীর জালে বল পাঠিয়ে ব্যবধান ৩-০ করে মতিঝিল পাড়ার জায়ান্টরা। তিন গোলে পিছিয়ে পড়া আবাহনী শেষ দিকে চাপ দিয়ে দুই গোল আদায় করে। কিন্তু সমতাসূচক গোল আর পায়নি তারা। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত আবাহনীকে ৩-২ গোলে হারিয়ে লিগে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে মোহামেডান। প্রথমে রহিম উদ্দিনের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। এরপর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এমানুয়েল কেকে। মুজাফফর মুজাফফরের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল আবাহনীর জালে ঠেলে উদ্যাপনে মাতেন তিনি। বিরতির পর মোহামেডানের তিন নম্বর গোল করেন গত লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ঘানার স্যামুয়েল বোয়াটেং। আবাহনীর হয়ে গোল দুটি করেন পাপন সিং ও শেখ মোরসালিন।
চলতি মৌসুমে এটাই মোহামেডানের প্রথম জয়। আগের দুই ম্যাচে একটিতে হার, আরেকটি ড্র করে সাদা-কালোরা। আবাহনী এ নিয়ে তিন ম্যাচ খেলে দুটিতে হেরেছে, অন্য ম্যাচটি ড্র হয়েছে। যে কারণে প্রথম জয়ের অপেক্ষা আরও বেড়েছে ধানমন্ডি পাড়ার জায়ান্টদের। গত মৌসুমে লিগে দুইবারের দেখায় একবার জিতেছিল মোহামেডান, আরেকবার হয়েছে গোলশূন্য ড্র।
ম্যাচের শুরুর দশ মিনিট অবশ্য একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে আবাহনী। ব্রাজিলিয়ান ব্রুনো মাতোস পায়ের কারিকুরিতে মুগ্ধ করেন সমর্থকদের। তৃতীয় মিনিটে হাসান মুরাদের দূরপাল্লার শট উঁচু কর্নার দিয়ে জালে পড়ার উপক্রম। তবে মোহামেডান গোলরক্ষক লাফিয়ে উঠে ঠেকিয়ে দেন তা। ২০ মিনিটে আবাহনীর রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যায় মোহামেডান। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা স্যামুয়েল বোয়াটেংকে ঠেকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন আবাহনী গোলরক্ষক মিতুল মারমা। তিনি কোনো চ্যালেঞ্জ জানানোর আগে কাটব্যাক করেন বোয়াটেং। যদিও তা গিয়ে পড়ে ইয়াসিন খানের পায়ে। তাতে আবাহনীর বিপদ কেটে গেছে বলেই ধরা হচ্ছিল। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী ফরোয়ার্ডের মতো ইয়াসিনের কাছ থেকে ছোঁ মেরে বল কেড়ে নেন রহিম উদ্দিন। এরপর ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল করেননি তিনি।
৩১ মিনিটে মুজাফফর মুজাফফরভের কর্নারে পা ছুঁইয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এমানুয়েল কেকে। বিরতির পর ৫৮ মিনিটে জাহিদ হাসান শান্তর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন স্যামুয়েল বোয়াটেং। তিন গোল হজম করে হুশ ফেরে আবাহনীর। ৭২ মিনিটে কাজেম শাহের পাসে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক গোল করেন পাপন সিংহ। ৭৮ মিনিটে জটলার মধ্য থেকে ব্যবধান আরও কমান মোরসালিন। পরে আরও কয়েকবার চেষ্টা করেও সমতায় ফিরতে পারেনি আবাহনী। ম্যাচ দেখতে ঢাকা থেকে কুমিল্লা ছুটে যান মোহামেডানের ব্যতিক্রমধর্মী সমর্থক গোষ্ঠী ‘মহাপাগল’ এর একঝাঁক সমর্থক। টি ইসলাম তারিক, টিক্কু জামান, মনির পাটোয়ারি প্রমুখদের গ্যালারিতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
আবাহনীর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় মোহামেডানের
খেলা
2,215 Views

