ইসলামের আগমনের অনেক আগে, আরব উপদ্বীপে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। আজও সেটি মুসলিমদের জন্য একটি জীবন্ত স্মৃতি। এটি আবরাহা নামে এক আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) সেই শাসকের গল্প, যিনি ইয়েমেন শাসন করে মক্কার কাবাকে প্রতিস্থাপন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আবরাহা ইয়েমেনে একটি বিশাল গির্জা তৈরি করে সেটিকে ‘নতুন কাবা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধুলিসাৎ হয়ে যায়, যখন আল্লাহর অলৌকিক হস্তক্ষেপে তাঁর সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়।
এই ঘটনা কোরআনের সুরা ফিলে (১০৫ নম্বর সুরা) বর্ণনা করা হয়েছে। বিখ্যাত তাফসিরকার ইবনে কাসিরের ব্যাখ্যায়ও এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। আজও এই গল্প আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের ইমানের স্থানকে কোনো মানুষীয় ক্ষমতা বা প্রাসাদ দিয়ে সরানো যায় না।
আবরাহা একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন, যার নাম ‘আল-কালিস’। গির্জাটি এত উঁচু ছিল যে এর চূড়া দেখার চেষ্টায় মানুষের মাথার পাগড়ি খসে পড়ত!
আবরাহার রাজনৈতিক সংকট ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা
ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, আবরাহা (যাকে আরবিতে আবরাহা আল-আশরাম বলা হয়) ইয়েমেনের আবিসিনিয়ার ভাইসরয় ছিলেন। তিনি একজন খ্রিষ্টান শাসক, যাঁরা অক্সুম সাম্রাজ্যের অধীনে আরবের বড় অংশ শাসন করতেন।
ইবনে কাসিরের তাফসির অনুসারে, আবরাহা তার আবিসিনিয়ান প্রভু নেগুসের সঙ্গে এক গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়েন। নেগুস তার ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেন। আবরাহা তাঁর প্রভুর ক্রোধ প্রশমনের জন্য ব্যয়বহুল উপহার পাঠান, কিন্তু তা যথেষ্ট হয় না।
তিনি একটি বড় পরিকল্পনা করেন: ইয়েমেনে একটি অত্যাধুনিক খ্রিষ্টান গির্জা তৈরি করা, যা আরবের হজযাত্রীদের মক্কা থেকে দূরে সরিয়ে আনবে। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমন্বয়—প্রভুর প্রীতি লাভ ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ।