ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক
দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হল তাবলিগ জামাতের তিন দিনের সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
রোববার সকাল ৯টা থেকে এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের শুরা সদস্য মাওলানা মো. জুবায়ের হাসান। আরবি, উর্দু ও বাংলা মিলিয়ে তিনি ২২ মিনিটে মোনাজাত শেষ করেন।
ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশের বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। এই মোনাজাত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এর আগে ফজরের পর হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক । ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা কিছু সময় নসিহতমূলক বক্তব্য দেন। পরে সকাল ৯টা ১ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে আলাদাভাবে। গত শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়।
এই পর্বে অংশ নেন কাকরাইল মারকাজের মাওলানা মো. জুবায়েরের অনুসারীরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ বলতে পছন্দ করেন।
প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয় কয়েক লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের বিদেশি অনুসারী থাকেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার।
তাবলিগ জামাতের নিয়মিত অনুসারী নন, এমন অনেকও বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শামিল থাকতে চান। সে কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে পৌঁছাতে শুরু করেন শনিবার দুপুর থেকে। বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন তারা।
তাদের যাতায়াত সহজ করতে শনিবার রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে ইজতেমাগামী যাত্রীদের যানবাহন ছাড়া সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করে দেয় গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। সারা রাত ধরেই ইজতেমা ময়দানের পথে মানুষের স্রোত চলে।
ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ হেঁটে অনেকে ইজতেমা মাঠের কাছাকাছি পৌঁছান।
ইজতেমা মাঠে জায়গা না পেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া সড়ক, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় হাজারো মানুষ। তাতে ওইসব এলাকায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
গাজীপুরের সফিপুর থেকে আসা আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায়। তিনি জানান, ভোর ৪টায় পিকআপে করে কালিয়াকৈর থেকে রওনা হয়ে ভোগড়া বাইপাসে এলাকায় আসেন ভোর সাড়ে ৬টায়। কিছু সময় পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করেন। পরিবহন না পেয়ে অন্য অনেকের মত হাঁটা শুরু করেন।
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকা থেকে আসা মুজিবুর রহমান বললেন, তার বাড়ি ঝালকাঠিতে। তবে স্টারলাইট সোয়েটার কারখানায় চাকরি পাওয়ায় কিছুদিন ধরে ভোগড়া এলাকাতেই থাকেন। আগে ইচ্ছে থাকলেও ঝালকাঠি থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা হয়নি তার। এবার যেহেতু গাজীপুরেই আছেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাতে চাননি। পায়ে হেঁটে আসার কষ্ট তিনি ভুলে গেছেন মোনাজাতে অংশ নিতে পেরে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা লোকমান মিয়া জানালেন, ভালুকা স্ট্যান্ড থেকে একটি মিনিবাসে করে তারা ২০ জন রওনা হয়েছিলেন রাত আড়াইটার দিকে। কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে এসে তারা মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
নরসিংদী থেকে আসা জামাল হোসেন বললেন, “আল্লাহকে রাজি খুশি করতেই শীতের রাতে এ কষ্টটুকু করেও তৃপ্তি পাচ্ছি।”
রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার লোকজনও শীত উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। মধ্যরাত থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেও ইজতেমা মাঠে পৌঁছান অনেকে।
ইজতেমার মাঠে যাদের জায়গা হয়নি, আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় এসে তারা মোনাজাতে হাত তুলেছেন।
মূল ইজতেমা ময়দানে নারীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ময়দানের বাইরে খালি জায়গায়, কলকারখানা ও বসত বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন বহু নারী।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের দিল্লি মারকাজের মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।