আইন ও অপরাধ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার রহস্য দ্রুত উদঘাটন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (২৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাজধানীর শাহজাহানপুরে এলোপাতাড়ি গুলি করে টিপু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, নাটের গুরু কারা সবকিছুই গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে নিয়ে আসা হবে। যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কি না— এমন প্রশ্নের করা হলে তিনি বলেন, কিলিং পলিটিক্যাল কি না সেই বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। আশা করি খুব শিগগির এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারব।
প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদও শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এরপর একে একে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নেতারা এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের নেতারা শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে জাহিদুল মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতি। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক মুন্না বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮।
এজাহারে ডলি বলেন, আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। আমার বাবার মতিঝিল কাঁচাবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে। আমার স্বামী রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। আমার স্বামী বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয়ভাবে কোন্দল ছিল। গত ৪-৫ দিন আগে আমার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল (বৃহস্পতিবার) মাইক্রোবাস নিয়ে গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্নাসহ তিনি হোটেলের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্ট কাজ শেষে বাসায় আসার পথে রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় গুলির কারণে আমার স্বামীর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের ওপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপর মারাত্মক জখম হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। দুষ্কৃতকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করার সময় প্রীতি নামে এক পথচারীও নিহত হন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তবে একই ঘটনায় রিকশায় থাকা যাত্রী বদরুন্নেসা কলেজছাত্রী প্রীতি খুনের বিষয়ে মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন তার বাবা। শুক্রবার সকালে ঢামেক মর্গে আসেন প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ের হত্যায় বিচার চাই না। মামলা চালানোর মতো অবস্থাও নেই। আমরা নিরীহ মানুষ। বিচার চাইলে আল্লাহ’র কাছে চাই। তিনিই বিচার করবেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রীতিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। সেখানে যাতায়াত কম। বাবার চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকা পরিবারের।
প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, মিরপুর-২ একটি কোম্পানির ফ্যাক্টরির প্রোডাকশনে চাকরি করি। বেতন বেশি পাই না। অনেক কষ্টে মেয়ে প্রীতি ও ছেলে সোহায়েব জামাল সামি ও স্ত্রীকে নিয়ে ২১৮ পশ্চিম শান্তিবাগে ভাড়ায় থাকি।
মেয়ে হত্যার বিচার চান কি না ও মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা করব না। মামলা পরিচালনা করার মতো অবস্থা ও সুযোগ আমার নাই৷ কোনো বিবাদে জড়াতে চাই না। কেউ যদি সহযোগিতা করে সেটা ভিন্ন বিষয়।
তিনি বলেন, প্রীতি বদরুন্নেসা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে প্রীতি নিজে চাকরির চেষ্টা করছিল৷ ১৫ হাজার টাকায় একটা অফিসে চাকরি নিয়েছিল। সামনের মাসে জয়েন করার কথা ছিল মেয়েটার। কিন্তু সেটা আর হলো না।