রংপুরের পীরগঞ্জের পুত্রবধূ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণে নতুন রূপে সেজেছে পীরগঞ্জ। মঙ্গলবার শ্বশুরবাড়ি আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার আগমনকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো পীরগঞ্জ। প্রশাসনিক পর্যায়েও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার সকালে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একেএম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনি পথসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সড়ক পথে পীরগঞ্জ যাবেন।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার শ্বশুরবাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে আসছেন। মঙ্গলবার সেখানে তার নিজ বাসভবন ‘জয় সদনে’ অবস্থান করবেন। তার আগমন উপলক্ষে প্রশাসন, দলীয় ও স্বজনরা নিয়েছেন ব্যাপক প্রস্তুতি। আয়োজন করা হয়েছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের।
ওই দিন বিকালে তিনি পীরগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে বিশাল জনসভায় ভাষণও দেবেন। জনসভাকে ঘিরে রংপুর বিভাগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পীরগঞ্জবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সেইসাথে পীরগঞ্জের সর্বত্র সাজসাজ রব পড়ে গেছে। গোটা উপজেলা ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুত্রবধূকে দীর্ঘদিন পর কাছ থেকে একনজর দেখার প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছেন পীরগঞ্জবাসী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে গত রোববার রাতে পীরগঞ্জ শেখ হাসিনা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদৎ হোসেন বকুল, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার পীরগঞ্জ উপজেলা সদরের সরকারি হাইস্কুলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী আগমন ঘিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র জয়ের ছবির সঙ্গে স্থানীয় নেতারা নিজেদের ছবি দিয়ে তোরণ আর ফেস্টুন লাগিয়েছেন। জনসমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। সড়কে লাগানো হয়েছে বহু মাইক। সবমিলিয়ে প্রস্তুত পীরগঞ্জ। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সড়কপথে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে আসবেন। সেখানে তার ছেলের অর্থায়নে নির্মিত ‘জয় সদন’ ভবনে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। প্রথমে তিনি তার প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ শ্বশুর-শাশুড়ির কবর জেয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে নাতনি সাবাবা হোসেন ওহি জানান, তার দাদি, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্বশুরবাড়িতে আগমন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিলবিলাতি আলু, খটখটিয়ার বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, দেশি মাছ, পিঠাসহ ২০ ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি স্বজনদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।
জয় সদনের তত্ত্বাবধায়ক ও পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মেরাজুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জয় সদন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিয়ের পর প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে এলেই প্রধানমন্ত্রী ঘরটির নানান স্মৃতি রোমন্থন করেন। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। এবার সময় কিছুটা কম পেলেও সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল জানান, তার বড় আব্বা মরহুম ড. ওয়াজেদের পারিবারিক বসতভিটায় তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে জয় আসলে সেখানেই অবস্থান করেন। এবারো প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতেই অবস্থান করবেন।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক স্বজন আছেন, যাদের সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা সবাই আসবেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন। এছাড়াও পারিবারিক নানান বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, মঙ্গলবার বেলা ৩টায় পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনি এলাকা রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জনসভা সফল করার জন্য চলছে ব্যাপক মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণা।
তিনি জানান, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপদেশ মোতাবেক মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। নারীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার রাখা হচ্ছে। এছাড়া দুটি মেডিকেল টিম জনসভাস্থলের দুপাশে অবস্থান করবে। তারা জনসভায় আগত কেউ অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। জনসভায় পীরগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষের ঢল নামবে।
দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষজন বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পীরগঞ্জ এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এলাকার পুত্রবধূকে দীর্ঘদিন পর কাছ থেকে একনজর দেখার প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছেন এলাকাবাসী। শেখ হাসিনা পীরগঞ্জের পুত্রবধূ। তার কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়া আছে। তিনি পীরগঞ্জকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করবেন, তবে এজন্য আমাদের দাবি করতে হয় না। উনি জানেন পীরগঞ্জের কী কী উন্নয়ন করা দরকার।