অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের যারা হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। তাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব আমরা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ঢাকার রাস্তার প্রতিটা দেওয়ালে প্রকাশ পেয়েছে আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের উদযাপন। মাইলের পর মাইল দেওয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে বিদায়ী এই শাসকের কার্টুন।
দেয়ালচিত্র নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, শব্দগুলো খুবই বিস্ফোরক, এই তরুণ মস্তিষ্কগুলো অনেক ভাবনা, উচ্চাকাঙ্খা ও আশা-আকাঙ্খায় ভরপুর। তারা তাদের ভবিষ্যতকে এ চিত্রগুলোতে ফুটিয়ে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘কাউকে খুঁজে নাও।’ কিন্তু পরে বললাম, ‘ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরাও তাদের জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
জুলাই ও আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আগের সরকার সম্পূর্ণ নিপীড়নের পরিবেশ তৈরি করেছিল। হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধন- এটি একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল। ড. ইউনূস দাবি করেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সাড়ে ৩ হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করেছিলেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। ধারণা করা হয়, ট্রাম্পকে আওয়ামী লীগ ও প্রভাবশালী ভারতীয় আমেরিকানরা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য লবিং করছে।
তবে ড. ইউনূস এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না; আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।
তবে অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের ধীরগতি সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। তিনি দেশটিকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনি ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দেশের বাইরে পাচার করা হাজার কোটি ডলার পুনরুদ্ধার করবেন।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই। এটি একটি খারাপ এবং স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ।