দেশ এখনো জঞ্জাল ও স্বৈরাচারমুক্ত হয়নি; তাই জাতীয় প্রয়োজনে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক তা ব্যর্থ করতে হবে।’
রবিবার সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি রয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে একটি দল দেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। এখন জাতীয় ইস্যুগুলোতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশ কারও একার নয়, সবার। দেশ এখনো ১৫ বছরের জঞ্জালমুক্ত হয়নি। তাই সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন।’
প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চাই উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘কোনো আগ্রাসী হাত আমরা দেখতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের দুটি দেশপ্রেমিক সংস্থাকে ধংস করে দেয়। প্রথমেই তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে। কিন্তু তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এদেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছে।’
ফ্যাসিস্ট সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে কারাগার বানিয়েছিল। তাদের মতের ন্যূনতম বাইরে গেলে খুন, গুম করা হতো এবং নির্যাতন ও জেল জুলুম দেওয়া হতো। দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে এদেশের ছাত্র-জনতা ন্যায়বিচারের স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়া এখন আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্য নিয়েই জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে কাজ করতে হবে।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলটির আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো। দলটির সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হোসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নড়াইল জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসাইন, দিঘলিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা আবুল হাসান, অভয়নগর উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মহিউল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ আমিনুল ইসলাম, শেখ সিরাজুল ইসলাম, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ, ফুলতলা উপজেলা আমীর আব্দুল আলিম মোল্লা, আব্দুল্লাহ আল ইমরান, শিরমনি আমির মাওলানা এমদাদুল্লাহ মাশরুর, গিলাতলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মশিয়ালী আমির মো. জাকারিয়া শেখ, হাফেজ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সমাবেশে স্বাগত বক্তৃতা করেন মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।