মস্তিষ্কের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্যানসার ‘গ্লিয়োব্লাস্টোমা’। একবার ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। চিকিৎসায় মূল লক্ষ্য থাকে শুধু রোগীর কষ্ট কমানো এবং বেঁচে থাকার সময় কিছুটা বাড়ানো। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন—মস্তিষ্কের এমন মরণব্যাধিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা কি আদৌ সম্ভব?
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বলছেন, সম্ভব—যদি ওষুধ পৌঁছানো যায় সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়। আর সেই কাজটি করতে পারে একটি সাধারণ নাকের ড্রপ।
নাক দিয়ে টানলেই সরাসরি মস্তিষ্কে ওষুধ!
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. আলেকজান্ডার স্টেগ জানান, ইনজেকশন বা প্রচলিত চিকিৎসার চেয়েও কার্যকর হতে পারে ন্যাজাল স্প্রে। নাক দিয়ে ড্রপ টানলে ওষুধ সোজা শ্বাসনালি হয়ে পৌঁছায় মস্তিষ্কের স্নায়ু পথ ধরে টিউমারের কাছে।
ফলে—
দ্রুত ওষুধ ছড়িয়ে পড়ে টিউমারের আশপাশে,
দ্রুত কাজ শুরু হয়,
সুস্থ কোষ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
গ্লিয়োব্লাস্টোমা শনাক্ত করাই দেরিতে হয়
অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া গ্লিয়োব্লাস্টোমা কোষ মস্তিষ্কের সুস্থ অংশ ধ্বংস করতে থাকে।
লক্ষণও উঠে আসে দেরিতে—
স্মৃতিভ্রংশ
ঝাপসা দৃষ্টি
আচরণগত পরিবর্তন
অনেকে এটি প্রথমে ডিমেনশিয়া ভেবে ভুল করেন। ফলে রোগ ধরা পড়তে পড়তেই চিকিৎসার সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়।
ন্যানোমেডিসিনে নতুন অগ্রগতি
গবেষকেরা এবার ভরসা রাখছেন ন্যানোমেডিসিন-এর ওপর—যেখানে অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণায় তৈরি ওষুধ শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।
ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষায় তারা দেখেছেন—
নাক দিয়ে নেওয়া ন্যানো-ওষুধ সরাসরি পৌঁছাচ্ছে ক্যানসার কোষে
আশপাশের সুস্থ কোষ অক্ষত থাকছে
ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কার্যকরভাবে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে
কেমো-রেডিয়েশনের বাইরে ব্যথাহীন চিকিৎসার সম্ভাবনা
কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন রোগীর শরীরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সেই তুলনায় নাকের ড্রপ—
ব্যথাহীন
সরল
দ্রুত কার্যকর
—এই হিসেবে ভবিষ্যতের ক্যানসার চিকিৎসায় বিপ্লব আনতে পারে।
মানুষের ওপরও শিগগিরই পরীক্ষা
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এবার বাছাই করা গ্লিয়োব্লাস্টোমা রোগীদের ওপরও পরীক্ষা চালানো হবে। সফল হলে মস্তিষ্কের ক্যানসার মোকাবিলায় এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। বিজ্ঞানী সমাজ এখন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে এই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য।

