অন্তর্বর্তী সরকার সংকট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি এখনো চাপের মধ্যেই রয়েছে। বস্তুত দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে টানা সাড়ে তিন বছর চলছে মন্দা। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জোরালো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতিতে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি, এখনো বিরাজ করছে অস্থিরতা। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগ। জানা যায়, চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিকে তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এগুলো হচ্ছে-উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক চাপ এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা। মূল্যস্ফীতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করা সম্ভব না হলে বহু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই বোঝা যায় দেশের অর্থনীতি এখনো কতটা চাপে রয়েছে। জানা যায়, গত এক বছরে আর্থিক খাতে সরকারের নেওয়া নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম চলমান। এর সুফল এখনো দেখা যাচ্ছে না। তবে চলতি অর্থবছরেই তা সামনে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচার রোধ, ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা আনাসহ গত এক বছরে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল চলতি অর্থবছরে দৃশ্যমান হতে পারে।
জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য বেকারত্ব কমানো। কর্মসংস্থান বাড়াতে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সুফল এখনো দৃশ্যমান নয়। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি, শিল্প খাতে মন্দা এখনো প্রকট। তবে গড়ে শিল্প থেকে উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যথেষ্ট কম। মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়েনি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানোর সঙ্গে এগুলো সম্পর্কিত।
দেশে গড়ে ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। তবে অনেক পুরোনো উপাত্তের ভিত্তিতে এ দারিদ্র্য হিসাব করা হয়েছে। ফলে বর্তমান বাস্তবতায় এ গবেষণা প্রতিবেদনটির উপযোগিতা কতটুকু, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ সূচকে ব্যক্তির আয়-রোজগারের ভিত্তিতে দারিদ্র্য নিরূপণ করা হয় না, বরং বিভিন্ন সেবার প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দারিদ্র্য নির্ধারণ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের টেকসই উন্নয়নেও নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে ৩১ জুলাই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত মুদ্রানীতির প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বার জানিয়েছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখায় তা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের পাশাপাশি সার্বিক শিল্পায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বেসরকারি খাত স্থবির হলে দেশের পুরো অর্থনীতিতেই এর প্রভাব পড়ে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থে বেসরকারি খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।