জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে আবার কর্মসূচি দিল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ছয়টি দল। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে গণসংযোগ, গণমিছিল ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া।
একই দাবিতে প্রথম দফায় রাজধানীসহ সারা দেশে দলগুলো সেপ্টেম্বরের ১৮, ১৯ ও ২৬ তারিখে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। চার দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার দলগুলো আলাদা সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা জানায়।
দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। এ ছাড়া প্রায় একই দাবিতে আন্দোলনে থাকা খেলাফত মজলিস ৪ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে প্রথম দফায় রাজধানীসহ সারা দেশে দলগুলো সেপ্টেম্বরের ১৮, ১৯ ও ২৬ তারিখে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। চার দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার দলগুলো আলাদা সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা জানায়।
১০ অক্টোবর ঢাকায় ৬টি দলের গণমিছিল
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জাগপা আজ বুধবার ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর সারা দেশে গণসংযোগ করবে। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার করবে দলগুলো। নেজামে ইসলাম পার্টি গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিতরণ ও জনমত তৈরির কর্মসূচি পালন করবে ২ থেকে ৯ অক্টোবর। আর খেলাফত আন্দোলন প্রচারপত্র বিলি, গণসংযোগ ও মতবিনিময় কর্মসূচি পালন করবে। তবে গতকাল এ বিষয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেনি।
১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে ছয়টি দলের পৃথক গণমিছিল কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে খেলাফত আন্দোলন ও নেজামে ইসলাম পার্টির কর্মসূচি শুধু ঢাকায়।
১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জাগপা।
রাজধানীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার
কর্মসূচি দেওয়া বাকি দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
আলোচনার মাধ্যমেও নিষ্পত্তি হতে পারে
গতকাল দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান কর্মসূচি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। সরকারপ্রধান এতে সাড়া দিয়ে জামায়াতকে বৈঠকে ডাকলে সেখানে দলের যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। আলোচনার টেবিলে এ বিষয়ের একটা নিষ্পত্তি হতে পারে, সে সুযোগও রয়েছে।
দলীয় লোগো পরিবর্তন করার বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, লোগো পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যেটি সবাই নতুন লোগো ভাবছে, সেটি চূড়ান্ত নয়। তিন-চারটি লোগো ডিজাইন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নীতিনির্ধারণী ফোরামে লোগো চূড়ান্ত হবে।
এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। সরকারপ্রধান এতে সাড়া দিয়ে জামায়াতকে বৈঠকে ডাকলে সেখানে দলের যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। আলোচনার টেবিলে এ বিষয়ের একটা নিষ্পত্তি হতে পারে, সে সুযোগও রয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাদের নিবন্ধন স্থগিত হয়ে আছে। ফলে আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে আসার কোনো সুযোগই নেই।
গতকাল সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন। দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ইস্যুতে তাঁদের দল সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের স্থায়ী বিলোপের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের ধীরগতি, আটক ব্যক্তিদের ৭৩ শতাংশ জামিনে মুক্তি পেয়েছে আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গতকাল রাজধানীর পল্টনে দলের মহানগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাগপার সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে ঢাকার বাইরে থাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার গতকাল গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা জানান। এ ছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্মসূচির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।