ক্রাইম ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: সুনির্দিস্ট কোন পেশা না থাকলেও অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া নামে আলোচিত এখন অপরাধ জগতে। স্বামী সুমন চৌধুরী ও পাপিয়া দম্পতি সাধারণ মানুষের কাঁতারে থাকলেও তাদের মুল আয়ের উৎস রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা। দুই মাসে হোটেল কর্তৃপকে পরিশোধ করেছে প্রায় কোটি টাকা। অবৈধ মাদক এবং অস্ত্র ব্যবসার সাথেও এই চক্র জড়িত। এই দম্পতির ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বিলাসবহুল ফ্যাটে অভিযান চালিয়ে র্যাব ৫৮ লাখ টাকা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করে।
র্যাব বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করে অর্থ আয়ের মাধ্যম ছিল তার। এছাড়াও রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক বই, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যাব।
রবিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে।’
‘‘পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন রেলওয়ে ও পুলিশের এসআই পদে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে জানা গেছে।’’
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, ‘পাপিয়ার আয়ের আরেকটি অন্যতম উৎস নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো। যাদের অধিকাংশ জনকেই নরসিংদী এলাকা থেকে চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় আনা হয়েছিলো। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো।’
পাপিয়ার সঙ্গে দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছবি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগে যদি কেউ কারো সঙ্গে ছবি তুলতে চায়; তাহলে বিষয়টি সাধারণত এড়ানো যায় না। তাই কারো সঙ্গে ছবি থাকা মানেই পাপিয়ার সঙ্গে সখ্যতার বিষয়টি প্রমাণ করে না।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ (২৮) চারজনকে আটক করে র্যাব-১।
সেসময় র্যাব জানায়, রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
বৈধ আয় অনুযায়ী পাপিয়ার বাৎসরিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। অথচ হোটেল ওয়েস্টিনে শুধুমাত্র গত তিন মাসেই বিল পরিশোধ করেছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যিনি নারী সংক্রান্ত অপকর্ম ছাড়াও অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
র্যাবের হাতে আটকের পর দিন রোববার যুব মহিলা লীগ থেকে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। মূত্র : এটিএন বাংলা ও সময় টিভি
অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক পাপিয়া দম্পতি। র্যাবের অভিযানে ৫৮ লাখ টাকা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার।
অপরাধ জগত
0 Views