সারাদেশে চলছে বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচিতে শাকসবজি পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এ সময়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ভোগান্তিতে পড়েন চাষি, ব্যবসায়ী এবং পরিবহন শ্রমিকরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) উত্তরের সীমান্তবর্তী সবচেয়ে বড় শাকসবজির মোকাম জয়পুরহাটের আক্কেলপুর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম শাকসবজি। মুলা, বেগুন, লাউ, শিম, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পটলসহ নানা সবজি বাজারে আসছে। সপ্তাহখানেক আগেও শাকসবজির বাজার ছিল চড়া। দুই-তিন দিন আগে খানিকটা কমেছিল। তবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে পরিবহন খরচ বাড়ায়, বেড়ে গেছে শাকসবজির দাম। এর প্রভাব পড়ছে সারাদেশের ক্রেতাদের ওপর।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আওয়ালগাড়ী গ্রামের ইসলাম হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন তিনি। সপ্তাহখানেক ধরে বিক্রি করছেন। প্রথম দিকে প্রতি পিচ ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও বুধবার সর্বোচ্চ ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। পরিবহন খরচের ভয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা লাউ কেনেননি। এতে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০টি ফুলকপি আনি বাজারে। এই মৌসুমে প্রতিটি কপি গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজকের বাজারে ২০-২২ টাকা বলেছেন পাইকাররা। গতকাল বিক্রি করেছিলাম ৩০ টাকা পিস। পাইকাররা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি, এজন্য দাম কম।
প্রতিদিন হাট ও বাজার বসে। কৃষকরা এখানে নিয়ে আসেন ক্ষেতের শাকসবজি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা শাকসবজি কিনে নিয়ে যান।
বুধবার বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা, মুলা ২২ থেকে ২৮ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, লাউ ১৫-২০ টাকা এবং পেঁপে ১০ টাকা কেজি।
স্বাভাবিক সময়ে যেখানে তিন থেকে চার টন শাকসবজি ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা, সেখানে অবরোধ কর্মসূচির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ-ছয় টন শাকসবজি পাঠাতে স্বাভাবিক সময়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলে এখন সেটি ৪০ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়।
কথা হয় এই বাজারের সবসময় ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় সবজি পাইকার মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, সবজি ঢাকায় পাঠানোতে কোনও সমস্যা নেই। সাধারণত আন্দোলনকারীরা শাকসবজির ট্রাক নিয়ে ঝামেলা করে না। কিন্তু ট্রাকের চালকরা ঝুঁকি নিতে চান না, এজন্য বেশি টাকা ভাড়া দাবি করেন। স্বাভাবিক সময়ে চার টন ও সাত টন সবজি পাঠাতে আমার যথাক্রমে ১৬ ও ২২ হাজার টাকা লাগলেও গত হরতাল ও অবরোধে একই পরিমাণ সবজি পাঠাতে দ্বিগুণ টাকা পরিবহন খরচ দিতে হয়।
কথা হয় এই বাজারের অপর পাইকার মিলনের সাথে। তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় দুই ট্রাক সবজি পাঠিয়েছি। আজও একই পরিমাণ পাঠিয়েছি। সবজি ঢাকায় পাঠাতে আমাদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এখন গাড়ি প্রতি যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
তিনি বলেন, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া সবজির ট্রাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠাতে পথে খরচ বেড়েছে। তবে পুলিশকে কোনও টাকা দেয়া লাগে না। বরং তারা সহায়তা করেন।
শীতকালীন সবজিতে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ আবাদ করেছেন জয়পুরহাটের চাষিরা। উৎপাদন ভালো আশা করলেও দামপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের।
কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, ধীরে ধীরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি উৎপাদনে যাবেন চাষিরা। জয়পুরহাট সবজি উৎপাদনে সবসময়ই ভাল অবস্থান করে। সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৩৫ শতাংশ সবজি উৎপাদন হয় এই জেলায়।