ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিবের হলভিত্তিক গণনায় প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৯৬২। তবে ডাকসুর ঘোষিত ফলাফলে উল্লেখ ছিল ৩ হাজার ৯২২। ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাকিব লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতাকে আমি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে রাখলাম।’
ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক অনেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটে অমিল দেখা দেওয়ায় তাঁরা ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়েছেন। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ফলে অনেকের ভোট বেশি এবং অনেকের কম। এটিকে যোগফল ভুল অথবা টাইপিংয়ে ভুল বলেছেন নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন। এগুলো নিরীক্ষা করে ওয়েবসাইটে সঠিক তথ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন রোববার রাতে বলেন, ‘হলের ঘোষণাটিই ফাইনাল রেজাল্ট। কয়েক দিন একটানা পরিশ্রম করার কারণে হয়তো হলের ভোট যোগ করতে গিয়ে ভুল করেছেন এই কাজে যুক্তরা অথবা যোগ করে বলেছেন একটা কিন্তু যিনি টাইপ করেছেন তিনি হয়তো আরেকটা শুনেছেন।’
সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. লানজু খানের প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৫৭১ হলেও প্রকাশিত ফলে উল্লেখ ছিল ১ হাজার ৫৩১। এ নিয়ে ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে আমার ভোট ১৫৩১টি হলেও প্রতিটি হলের ভোট গণনা করে আমার ভোট এসেছে ১৫৭১টি। ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।’
একই পদে প্রার্থী হয়েছিলেন ফারিয়া মতিন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার সর্বমোট ভোট দেখায় ২১৪৭ কিন্তু সবগুলো হলের ভোটসংখ্যা গণনার পর যা দাঁড়ায় ২১৬১। তাহলে এই যে ২১৬১ থেকে ২১৪৭ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা সেইটার মানে কী? এবং কীভাবে অ্যাডজাস্ট হইল এই ভোটটা? এখনো বলবেন ডাকসুর ফলাফল সুষ্ঠু হইসে?’
সদস্য পদে আবিদ আবদুল্লাহর প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার ৪২৩ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে উল্লেখ করা হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৩। এ বিষয়ে আবিদ আবদুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘কিছুক্ষণ পর দেখব প্রশাসন থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলবে আমার মোট ভোট প্রকাশে টাইপিং মিসটেক ছিল।’ অন্যদিকে সদস্য পদে আবির হাসানের ভোট ৩ হাজার ২২৬ হলেও দেখানো হয়েছিল ৩ হাজার ৩২৬।
সহসভাপতি পদে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মোট ৬টি ভোট পেলেও ৮টি ভোট উল্লেখ করা হয়েছিল। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আশরেফা খাতুন ৮৯০ ভোট পেলেও ৯০০ ভোট দেখানো হয়েছিল। সমাজসেবা সম্পাদক পদে তাওহিদুল ইসলামের ২ হাজার ৪৪ ভোটকে ২ হাজার ৪৫ দেখানো হয়েছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাকের প্রকৃত ভোট ২ হাজার ১১, তবে ২ হাজার ২১ ভোট উল্লেখ করা হয়েছিল।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী আসিফ আবদুল্লাহর প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ১০১। তবে কেন্দ্রীয় ফলাফলে ৯ হাজার ৬১ উল্লেখ করা হয়েছিল। একই পদে মাহাথির খান নিনাদ ও মো. রায়হানের ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও ১০টি করে বাড়িয়ে ফলাফলে ৭০৪ ও ৩১৫ দেখানো হয়েছিল।
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মাজহারুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৮৪৪ হলেও কেন্দ্রীয় ফলাফলে উল্লেখ ছিল ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদল প্যানেলের চিম চিম্যা চাকমার প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৮৮৮ হলেও প্রকাশিত ফলাফলে উল্লেখ ছিল ৩ হাজার ৭৮৮। সদস্য পদে সর্বমিত্র চাকমার প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৫৪৮ হলেও প্রকাশিত ফলাফলে উল্লেখ ছিল ৮ হাজার ৯৮৮।
সমালোচনার পর ওয়েবসাইট থেকে ভুল তথ্য সরিয়ে নিয়ে আবার সঠিক তথ্য দেওয়া হয়েছে।