অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে প্রশ্নবিদ্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার স্বার্থে আমরা মনে করি, খারাপ নির্বাচন হলেও জাকসু থাকা, জাকসু না থাকার চেয়ে ভালো।
আজ শুক্রবার রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ) নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের শুরু থেকেই নানারকম অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। তফসিলে ঘোষিত মনোনয়নপত্র দাখিলের সবশেষ তারিখের আগের দিন গভীর রাতে একটি নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাড়ায় নির্বাচন কমিশন।’
এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ভোটার ও প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বেশ কয়েক দিন পর একটি প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের নজিরবিহীন ঘটনা এবং পরবর্তীতে আইনি নানা প্রক্রিয়া নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সেই সঙ্গে ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ডোপ টেস্টের (মাদকগ্রহণ পরীক্ষা) নিয়ম রাখা হলেও সকল প্রার্থী ডোপ টেস্ট করিয়েছেন কি না, সেটি এখনো জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন পার হয়ে গেলেও ডোপ টেস্টের ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। যদি বিজয়ী কোনো প্রার্থীর ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসে, তাহলে যে জটিলতা তৈরি হবে সে বিষয় সুরাহার সুনির্দিষ্ট কোনো উপায় জানায়নি নির্বাচন কমিশন।
এই ভিপি প্রার্থী বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের উপস্থিতি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি করেছে।
আরিফুজ্জামান আরও বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার জন্য আমাদের বারবার আবেদনের পরও নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি। নির্বাচনের দিন ভোররাত তিনটায় ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন। এত স্বল্প সময়ের নোটিশে পোলিং এজেন্ট ব্যবস্থা করা সকল প্রার্থীর জন্যই কঠিন কাজ ছিল। এর ফলে নির্দিষ্ট কোনো পক্ষ অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন প্রচার চালানো নিষিদ্ধ হলেও, অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থীদের লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে বলেও অভিযোগ করেন এই ভিপি প্রার্থী। এ ছাড়া বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে পরিচয় নিশ্চিত না করেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন বলেও দাবি করেন আরিফুজ্জামান।
আরিফুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ হলে ভোট প্রদান শেষে হাতে দেওয়া হয়নি কোনো অমোচনীয় কালি। যেসব হলে দেওয়া হয়েছে, সেসব কালিও সহজেই উঠে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোটার তালিকায় নামের পাশে ভোটারের ছবি ছিল না। কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদের ব্যালট পেপারে তিনজনকে ভোট দেওয়ার জায়গা থাকার কথা থাকলেও একজনকে ভোট দেওয়ার জায়গা ছিল। ফলে ব্যালট পেপারে লিখে ভোট দিতে হয়েছে।
এই ভিপি প্রার্থীর অভিযোগ, ভোটার উপস্থিতির তালিকায় টিক দেওয়া হয়েছে কলমের পরিবর্তে পেনসিল দিয়ে। ফলে একজন ব্যক্তির একাধিক বার ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। কেউ এই সুযোগ গ্রহণ করেছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শহীদ সালাম-বরকত হলে একজন ভোটারের ভোট অন্য কেউ আগেই প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে প্রবেশ করেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটারদের লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের টোকেন ও লিফলেট বিতরণ করে তাদের কর্মীরা।
সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও প্রস্তুতির অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেন এই ভিপি প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের এই প্রস্তুতির অভাবের সুবিধা নিয়েছে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষের মধ্যে পেশিশক্তির জোরে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা আমরা দেখেছি।’
তবে এত প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে তাঁদের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন বাগছাস-সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের এই ভিপি প্রার্থী।