এডুকেশন ডেস্ক, ফরিদা ইয়াসমিন নার্গিস, আজনিউজ২৪: কোভিড-১৯ মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কিন্ডার গার্টেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা ধ্বস নামে। চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত স্বনামধন্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা চালু করায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলেছেন। সরকারি আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানা উদ্যোগে দেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এসব কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো।
স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। এতে করে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ছুটি আরও দীর্ঘ হলে স্কুল টিকবে কিনা, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। আর বন্ধের মধ্যে মালিকরা বেতন দিতে না পারায় সরকারি সহায়তার দিকে চেয়ে আছেন অনেক শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ফি ছাড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুলের আয়ের অন্য কোনও উৎস নেই। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আয়ের আরেকটি উৎস টিউশনি। এর সবই করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে। ঈদের ছুটির পরও স্কুল চালু করা সম্ভব হয়নি। আর এর কারণে এসব শিক্ষকদের পরিবারের আয়-রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কিন্ডার গার্টেন স্কুল গুলো বন্ধ হওয়ার উপযোগী হয়ে পড়েছে। এসকল স্কুলে যারা শিক্ষক ও কর্মচারী ছিলেন তাদের অনেকের চাকরি চলে গেছে। অনেকের বেতন বন্ধ। এ সকল শিক্ষকগণ কিভাবে দিনযাপন করছে তার খবর কেউ রাখে নি। তারা কারোর কাছে হাত পাততে পারে না। মুখ বুজে সমস্ত দুঃখ কষ্ট নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে রেখেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেৱ মালিক স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউবা যত্নে গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ কেউ পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করে সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছে।
নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে আজনিউজ টোয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদক ফরিদা ইয়াসমিন নার্গিস খুঁজে পান ঢাকার নিকুঞ্জ-২ অবস্থানরত বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাহবুব আলী খানের নিজহাতে গড়া মার্ক আইডিয়াল স্কুলটি। যদিও তিনি একটানা দীর্ঘ সময় ধরে মেরিন ক্যাপ্টেন ছিলেন। তারপরও এই বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হওয়ায় তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় মানসম্মত বিদ্যালয়ের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে তিনি নিকুঞ্জ-২ মার্ক আইডিয়াল স্কুল নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে স্থাপতি হয়। বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। পিইসি জেএসসি বোর্ড পরীক্ষায় এ প্লাসসহ পাশের হার ছিলো শতভাগ। পি ই সি পরীক্ষায় বোর্ড বৃত্তি পেয়ে আসছে এই স্কুলে শিক্ষার্থীরা। করোণা প্রাদুর্ভাবে এই স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। সরকারের একাত্মতা ঘোষণা দিয়ে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (মাস্টার মেরিনার) মাহবুব। করোণা প্রাদুর্ভাবে অভিভাবকদের সহযোগিতা করার জন্য স্কুলে টিউশন ফি শতকরা ২৫ ভাগ কমিয়ে দিয়েছেন। করোণা পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সহযোগিতা করলেও অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করা সত্ত্বেও কোনভাবে স্কুলকে সহযোগিতা করছে না। এমত অবস্থায তিনি দীর্ঘ কয়েক মাস নিজ উদ্যোগে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মালিক বলেন , আজ দীর্ঘ ৬ মাস যাবত আমার নিজের কষ্টে গড়া স্কুল করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে। ১০ বছর তিলেতিলে যত্নে গড়ে তুলেছি যে প্রতিষ্ঠান আজ স্কুলের শিক্ষকদের বেতন ভাতা চালানো অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি যাদের নিয়ে এই ১০টি বছর কাটিয়েছি তারা সবাই নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেনির। তাদের সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে আমার প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হোত। এদিকে, এতো কিছুর পরও এই সাবেক মেরিন কর্মকর্তা অনলাইন ক্লাশ, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা, ছাত্র-ছাত্রীদের খোঁজ-খবর নেয়াসহ প্রতিটি সেক্টরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন বলেও জানা যায় প্রতিবেদকের কাছ থেকে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় স্কুল প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাহবুব আলী খান নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য সামগ্রীসহ নগদ অর্থ তুলে অসহায় মানুষদের ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে।
এই সংকটময় মুহূর্তে এমনই এক প্রতিষ্ঠান ঢাকার নিকুঞ্জ-২ অবস্থিত মার্ক আইডিয়াল স্কুলটি। মার্ক আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা যদিও পেশায় ক্যাপ্টেন ছিলেন, তারপরও পেশায় তিনি একজন শিক্ষকের পুরোপুরি ভূমিকা পালন করে আসছেন।