বলিউড তারকাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে হুহু করে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত খরচ। কারও দাবি আলাদা ভ্যানিটি ভ্যান, কারও আবার শুটিং সেটেই চাই জিম আর রান্নাঘরের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এই বাড়তি খরচ প্রযোজকদের জন্য হয়ে উঠছে বড় চাপ। সম্প্রতি এই সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। এবার তারকাদের ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়া। যেখানে শাহরুখ থেকে রণবীর সিং, জন আব্রাহামদের ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। ভ্যানিটি ভ্যান সরবরাহকারী কেতন রাভালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। রাভাল জানিয়েছেন, শুটিংয়ে তিনটি ভ্যানিটি ভ্যানের চাহিদা রণবীর সিংয়ের। একটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, একটি জিম হিসেবে, আরেকটি তাঁর ব্যক্তিগত শেফের জন্য। আর শাহরুখ খানের ভ্যান এত বড় ও বিলাসবহুল যে অনেক সময় দূরবর্তী বা সংকীর্ণ শুটিং লোকেশনে সেটি নেওয়া যায় না। তখন কেতন রাভাল নিজেই বিকল্প ভ্যান পাঠান।
জন আব্রাহামের ভ্যান সম্পর্কেও তিনি জানান, অভিনেতার বিশেষ অনুরোধে ভ্যানে একটি ফ্লোর-টু-সিলিং উইন্ডো বসানো হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক আলো ঢুকতে পারে। তবে ইন্টেরিয়র পুরোপুরি কালো রঙে সাজানো—মেঝে, দেয়াল, বেসিন, এমনকি টয়লেটও। ফলে বাইরে থেকে আসা আলো একেবারে অন্ধকার ঘেরাটোপে বন্দী থাকে।
অন্যদিকে, কঙ্গনা রনৌতের ভ্যান বলিউডের সবচেয়ে দামি ভ্যানগুলোর একটি। বিলাসবহুল ভ্যান নির্মাতা প্রতীক মালেওয়ার জানান, কঙ্গনা শীশম কাঠের ইন্টেরিয়র চেয়েছিলেন। এই কাঠ সংগ্রহ করা অনেক কঠিন, যা রক্ষণাবেক্ষণ করাও বেশ ঝামেলার। প্রতীক বলেন, ‘কঙ্গনা ম্যাডাম নিজে নকশার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে বসে কাপড়, ডিজাইন, প্রিন্ট—সবকিছু বেছে নিয়েছেন। তিনি এটাকে ভ্যান হিসেবে নয়, নিজের ঘর হিসেবে ভেবেছিলেন।’
ভ্যানিটি ভ্যান সরবরাহকারী কেতন রাভালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। রাভাল জানিয়েছেন, শুটিংয়ে তিনটি ভ্যানিটি ভ্যানের চাহিদা রণবীর সিংয়ের। একটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, একটি জিম হিসেবে, আরেকটি তাঁর ব্যক্তিগত শেফের জন্য। আর শাহরুখ খানের ভ্যান এত বড় ও বিলাসবহুল যে অনেক সময় দূরবর্তী বা সংকীর্ণ শুটিং লোকেশনে সেটি নেওয়া যায় না। তখন কেতন রাভাল নিজেই বিকল্প ভ্যান পাঠান।
জন আব্রাহামের ভ্যান সম্পর্কেও তিনি জানান, অভিনেতার বিশেষ অনুরোধে ভ্যানে একটি ফ্লোর-টু-সিলিং উইন্ডো বসানো হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক আলো ঢুকতে পারে। তবে ইন্টেরিয়র পুরোপুরি কালো রঙে সাজানো—মেঝে, দেয়াল, বেসিন, এমনকি টয়লেটও। ফলে বাইরে থেকে আসা আলো একেবারে অন্ধকার ঘেরাটোপে বন্দী থাকে।
অন্যদিকে, কঙ্গনা রনৌতের ভ্যান বলিউডের সবচেয়ে দামি ভ্যানগুলোর একটি। বিলাসবহুল ভ্যান নির্মাতা প্রতীক মালেওয়ার জানান, কঙ্গনা শীশম কাঠের ইন্টেরিয়র চেয়েছিলেন। এই কাঠ সংগ্রহ করা অনেক কঠিন, যা রক্ষণাবেক্ষণ করাও বেশ ঝামেলার। প্রতীক বলেন, ‘কঙ্গনা ম্যাডাম নিজে নকশার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে বসে কাপড়, ডিজাইন, প্রিন্ট—সবকিছু বেছে নিয়েছেন। তিনি এটাকে ভ্যান হিসেবে নয়, নিজের ঘর হিসেবে ভেবেছিলেন।’
খুঁতখুঁতে চাহিদা ও অদ্ভুত অনুরোধ
কখনো কখনো তারকাদের দাবি প্রায় হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রতীক মালেওয়ারের কথায়, ‘একজন অভিনেতা চেয়েছিলেন যেন সব সুইচবোর্ড মেঝেতে রাখা হয়, যাতে সেগুলো তাঁর সেলফিতে না আসে। এটা বাস্তবে সম্ভব ছিল না, তাই না বলতে হয়েছে। তবে বেশির ভাগ সময় আমরা অদ্ভুত অনুরোধও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।’
তারকাদের খুঁতখুঁতে অভ্যাসও এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কেতন রাভাল জানান, পরিণীতি চোপড়া রুম ফ্রেশনার পছন্দ করেন না। তিনি শুধু জুহুর একটি নির্দিষ্ট দোকানের ধূপকাঠিই ব্যবহার করেন। তাই যখনই তাঁর ভ্যান পাঠানো হয়, একটি ছেলের দায়িত্ব থাকে ওই নির্দিষ্ট দোকান থেকে সেই ধূপকাঠি আনা আর ভ্যান প্রস্তুত করে রাখা, যাতে তিনি পৌঁছানোর আগেই সেটি ঠিক থাকে।
এ প্রতিবেদনে ভ্যান ‘প্রস্তুত’ নিয়েও অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যমটিকে এক প্রযোজনা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানান, ভ্যান প্রস্তুত না থাকলে অনেক তারকা শুটিং শুরু করেন না। তিনি বলেন ‘অনেকে তো ভ্যানিটি ভ্যান প্রস্তুত না থাকলে শুটিং শুরু করতেই অস্বীকার করেছেন। এই আচরণ আসলে তারকা ভাবমূর্তিরই অংশ। অদ্ভুত রকমের খুঁতখুঁতে চাহিদা না থাকলে, মানুষই–বা কীভাবে বুঝবে যে আপনি একজন তারকা?’
সর্বশেষ বাড়তি আসক্তি? জিম ভ্যান। প্রতীক মালেওয়ার জানান, এখন অনেক অভিনেতাই আউটডোর শুটিংয়ে নিজেদের সঙ্গে একটি জিম ভ্যান রাখতে চান, যাতে বিরতির সময়ে সহজেই ব্যায়াম সেরে নেওয়া যায়। আরেক ভ্যানিটি ভ্যান সরবরাহকারী অপূর্ব দেশমুখ যোগ করেন, ‘একজন সুপারস্টার আমাদের বলেছিলেন, তাঁর মূল ভ্যান আর জিম ভ্যানের মধ্যে একটি গোপন দরজা বানিয়ে দিতে, যাতে ব্যায়াম করার পর ঘামভেজা অবস্থায় মিডিয়ার চোখে পড়তে না হয়।’
জুনিয়র শিল্পীদের চ্যালেঞ্জ
তবে এর উল্টো চিত্রও আছে শুটিংয়ে। নতুন অভিনেতা আর ব্যাকগ্রাউন্ড শিল্পীদের জন্য ভ্যান না থাকা শুধু অসুবিধাই নয়; সেটা অপমানজনকও বটে। অনেকে ত্রিপল টাঙানো তাঁবুর ভেতরে পোশাক বদলান, অস্থায়ী পর্দার আড়ালেও অনেকে বদল করেন, আর অন্যদিকে তারকারা এসির ঠান্ডা হাওয়ায় বসে কফিতে চুমুক দেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। অনেক প্রযোজনা সংস্থা জুনিয়র আর্টিস্টদের জন্যও ভ্যান দিচ্ছে। কেতন রাভাল বলেন, ‘পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো এখন নিশ্চিত করে যে অন্তত একটি সাধারণ ভ্যান সব জুনিয়র শিল্পীর জন্য রাখা হয়। তবে সেগুলো সাধারণত দুই দরজার ছোট ভ্যান, যেখানে কেবল ন্যূনতম সুবিধাই থাকে।’
ভ্যানিটি ভ্যানের খরচ কেমন
প্রতিবেদনে বলা হয় একটি ভ্যানের গড় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মাসে প্রায় ১০-১৫ লাখ রুপি। শীর্ষ মানের ‘সুপার ভ্যান’–এর দাম ২-৩ কোটি টাকা। বিলাসবহুল উপকরণ (ইতালিয়ান মার্বেল, লাক্সারি রিক্লাইনার, জিম সুবিধা) যুক্ত কাস্টম ভ্যানের দাম ৭৫ লাখ থেকে ১ কোটি রুপি। মাঝারি মানের ভ্যান (সোফা, সাধারণ ওয়াশরুম, টিভিসহ)–এর দাম ৩৫ থেকে ৫০ লাখ রুপি। আর একেবারে বেসিক ভ্যান (শুধু ড্রেসিং এরিয়া ও এসি যুক্ত) পাওয়া যায় ১৫-২০ লাখ রুপিতে।
স্টারডমের প্রতীক
একদিকে ভ্যানিটি ভ্যান শিল্পীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলের মতো, যেখানে তাঁরা শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি থেকে কিছুটা বিশ্রাম পেতে পারেন। অন্যদিকে, এটি হয়ে ওঠে এক প্রকার সোনার খাঁচা, যা তারকাদের আলাদা করে রাখে সেই দলের কাছ থেকে, যারা আসলে তাদের সিনেমা তৈরি করে। অর্থাৎ, ভ্যানিটি ভ্যান এখন তারকাখ্যাতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, বক্স অফিসে ফল যা-ই হোক!
বিস্মিত আমির খান
তারকাদের ব্যক্তিগত খরচ নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমিরের। তবে তাঁর মতে তা প্রযোজকের ঘাড়ে আসা উচিন নয়। গেম চেঞ্জার্স ইউটিউব চ্যানেলে কোমল নাহতাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, ‘তারকাদের সম্মান দেওয়া উচিত, কিন্তু সেটা এমন পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয় যে প্রযোজকেরাই সমস্যায় পড়ে যান।’
আমির জানান, প্রায় ৩৭ বছর আগে যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন, তখনো প্রচলন ছিল প্রযোজক তারকার গাড়িচালক ও সহকারীদের বেতন দিতেন। আমিরের চোখে বিষয়টি ছিল অদ্ভুত, ‘গাড়িচালক আমার হয়ে কাজ করছে, প্রযোজক কেন তার বেতন দেবেন? যদি প্রযোজক আমার স্টাফদের খরচ দেন, তাহলে কি তিনি আমার সন্তানদের স্কুল ফিও দেবেন? কোথায় গিয়ে থামবে এটা?’
আমির খান পরিষ্কার করে বলেন, ‘প্রযোজককে সেই খরচই বহন করা উচিত, যা সরাসরি ছবির সঙ্গে যুক্ত—মেকআপ, হেয়ার, কস্টিউম। কিন্তু গাড়িচালক, গাড়িচালকের সহকারী বা পার্সোনাল স্টাফ তো আমার কাজ করছে, তাদের বেতন দেওয়া আমার দায়িত্ব। প্রথম দিন থেকেই আমি এই নিয়মে অটল। গত ৩৭ বছরে কোনো প্রযোজককে আমি কখনো এসব খরচ বহন করতে দিইনি।’
কিন্তু বর্তমান সময়ের চিত্র দেখে বিস্মিত আমির। ‘আজকের তারকারা নাকি নিজের গাড়িচালকের বেতন পর্যন্ত দেন না, প্রযোজককে দিতে হয়। শুধু তা–ই নয়, স্পটবয়, ট্রেইনার, কুক, এমনকি সেটে লাইভ কিচেনের খরচও চাপিয়ে দেন প্রযোজকের ওপর। একাধিক ভ্যানিটি ভ্যান চাওয়া হয়, কারও জন্য জিম, কারও জন্য রান্নাঘর’, বিরক্তি নিয়ে বলেন অভিনেতা।
তবে তিনি এটাও জানান, তারকারা চাইলে এসব সুবিধা নিতে পারেন, সমস্যা হলো, সেটা প্রযোজকের ঘাড়ে চাপানো। আমিরের ভাষ্যে, ‘তোমরা কোটি কোটি টাকা আয় করছ, অথচ নিজের খরচ দাও না? এটা খুবই দুঃখজনক। শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। আমি স্পষ্ট বলছি, এটা লজ্জাজনক।’
আমিরের মতে, একজন অভিনেতার প্রথম দায়িত্ব হলো প্রযোজকের ওপর বাড়তি বোঝা না চাপানো। ‘আমরা সবাই একসঙ্গে ছবির জন্য কাজ করি। টিম প্লেয়ার হিসেবে সবারই এই সচেতনতা থাকা উচিত’, বলেন তিনি।
তবে ব্যতিক্রমও আছে, আমির স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কখনো ছবির প্রয়োজনে যদি বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার হয়, তখন অবশ্যই সেটা প্রযোজকের খরচে হবে। যেমন “দঙ্গল”-এ কুস্তির প্রশিক্ষণ। কিন্তু রান্নার খরচ প্রযোজক বহন করবেন, এটা একেবারেই অযৌক্তিক। এরপর হয়তো নতুন ফ্ল্যাট কেনার খরচও প্রযোজকের ওপর চাপানো হবে!’
শেষে তিনি যোগ করেন, ‘আজও আমি যখন পরিবার নিয়ে আউটডোর শুটে যাই, সব খরচ নিজের পকেট থেকে দিই। প্রযোজককে কখনোই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে বলিনি। আজকের তারকারা নিজের অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছেন, যা তাঁদের ভাবমূর্তিকেই নেতিবাচক করছে।’