ইসলামে অজু হলো ইবাদতের পূর্বে পবিত্র হওয়ার একটি মাধ্যম। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও, তখন অজু করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)
তবে কিছু কারণে অজু নষ্ট হয়ে যায়, যা জানা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। অজু ভঙ্গের কারণগুলো জানলে আমরা ইবাদতের পবিত্রতা বজায় রাখতে পারি।
অজু ভঙ্গের কারণ
অজু ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো এই:
১. প্রাকৃতিক পথ দিয়ে নির্গত হওয়া: পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন যে–কিছু নির্গত হওয়া। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও নামাজ হবে না, যদি তার ‘হাদাস’ হয় আর অজু না করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৫)
‘হাদাস’ মানে পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন যে–কিছু নির্গত হওয়া।
২. ক্ষতস্থান থেকে বের হওয়া তরল: শরীর কোথাও থেকে রক্ত, পুঁজ বা হলুদ পানি এতটুকু যদি বের হয়, যা গড়িয়ে পড়ার মতো, তাহলে তা অজু ভঙ্গ করে।
৩. গভীর ঘুম: গভীর ঘুমে পড়ে গেলে অজু ভেঙে যায়; কারণ, এ সময় শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে বসে বা হালকা ঘুমে অজু ভাঙে না। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘চোখ জাগ্রত থাকলে পায়ু বন্ধ থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৮৯৩) ৪. সংজ্ঞা হারানো: মূর্ছা যাওয়া, মদ্যপান বা অন্য কারণে সংজ্ঞা হারালে অজু ভেঙে যায়।
৫. জননাঙ্গ স্পর্শ: পুরুষ বা নারী সরাসরি যৌনাঙ্গ দিয়ে অন্যের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভাঙে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে তার জননাঙ্গ স্পর্শ করে, সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৮১)
৬. বমি: প্রবল বেগে মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যায়।
৭. নামাজে হাসা: নামাজে জোরে হাসলে অজু ও নামাজ দুটিই ভেঙে যায়। তবে মৃদু হাসলে শুধু নামাজ নষ্ট হয়।
ব্যতিক্রম ও বিশেষ বিধান
কিছু ক্ষেত্রে অজু ভাঙে না:
হালকা রক্তপাত: কোনো ক্ষতস্থানে সামান্য রক্ত দেখা দিলে, মানে গড়িয়ে পড়ার মতো না হলে, তাতে অজু ভাঙে না।
খাবার স্পর্শ বা খাওয়া: খাওয়াদাওয়া বা হাত দিয়ে খাবার স্পর্শ করলে অজু ভাঙে না।
স্ত্রীকে স্পর্শ করা: স্ত্রী বা স্বামীকে স্পর্শ করলে অজু ভাঙে না।
অজু শুধু শারীরিক পবিত্রতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রশান্তির মাধ্যম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং তা ভালোভাবে সম্পন্ন করে, তার গুনাহ মাফ হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫)