‘লুকোচুরি শেষ হলো, আয় রে আয় খোকা/ খুঁজে তোকে ঘুরে ঘুরে, ক্লান্ত এবার তোর মা’—উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অকালে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের জন্য মায়ের আকুতি গানে তুলে এনেছেন তরুণ সংগীতশিল্পী মল্লিক ঐশ্বর্য। গানটিতে উঠে এসেছে সন্তানহারা মায়ের হাহাকার আর কষ্ট। ‘আয় রে আয় খোকা’ শিরোনামের গানটি বলিউডের রং দে বাসন্তী সিনেমার ‘লুকাছুপ্পি’ গানের ভাবানুবাদ। যার মূল সুরকার এ আর রাহমান। হিন্দি গানটির লেখক প্রসূন যোশী ও নাসিম। সেই লেখাটিকেই ভাবানুবাদ করেছেন মল্লিক ঐশ্বর্য। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন তরুণ সংগীতশিল্পী ইন্নিমা রশ্মি। গানটির শব্দ প্রকৌশলে ছিলেন শুভ। ফেসবুকে প্রকাশের ২১ ঘণ্টায় গানটির ভিউ ছাড়িয়েছে ১১ লাখ, আর শেয়ার হয়েছে ৭ হাজার। গানটি নিয়ে মল্লিক ঐশ্বর্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার পর শুধু আমি কেন, দেশের কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারেনি। পরদিন গানটিকে এভাবে লেখার বিষয়টা মাথায় আসে। “লুকাছুপ্পি”র আক্ষরিক অর্থ লুকোচুরি, তবে আমার দেওয়া নাম “আয় রে আয় খোকা”। এক দিনেই লেখা, পরিকল্পনা ও রেকর্ড। প্রতিভাবান তরুণ সংগীতশিল্পী ইন্নিমা রশ্মিকে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে গানটি তুলে আমাকে পাঠায় ও। গানটিতে বাচ্চাদের অংশগ্রহণ চেয়েছিলাম। আমার গানের স্কুল জাদুর কাঠির বাচ্চারা গানটিতে অংশ নিয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই গানটি সাড়া ফেলেছে। তবে মল্লিকের কথা, জনপ্রিয়তা পেতে নয়, গানটির মাধ্যমে মানুষের ভেতরের হাহাকার তুলে ধরতে চেয়েছেন। মল্লিক বলেন, ‘গানটি সবার হৃদয় ছুঁতে পেরেছে, এটাই প্রাপ্তি। মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় নিহত সবার আত্মা শান্তি পাক।’
গানটিতে রশ্মির গায়কি শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। এ তরুণ সংগীতশিল্পীও মনে করছেন, এ গান একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। রশ্মি বলেন, ‘মল্লিক দাদা গানের কথাগুলো পাঠানোর পর সারা রাত কেঁদেছি। মন এতটা ভার হয়েছিল, গান কি রেকর্ড করব, একেকটা লাইন পড়ার পর চোখ ভিজেছে। এরপর গানটি রেকর্ড ও ভিডিও করে দাদাকে পাঠাই। প্রকাশের পর থেকেই অনেকেই কল দিচ্ছেন, তাঁদের ভেতরের কষ্ট ও যন্ত্রণা শেয়ার করছেন। এ গানের মাধ্যমে এ ঘটনায় একজন শিল্পীর দায় পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’
ফেসবুকে গানটি প্রকাশের পর অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, নাজনীন হাসান চুমকি, সংগীতশিল্পী পান্থ কানাইসহ শোবিজের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একেকটা মন্তব্য যেন একেকটা শোকবার্তা। চঞ্চল চৌধুরী ও পান্থ কানাই কান্নার ইমোজি দিয়েছেন, আর নাজনীন চুমকি লিখেছেন, ‘ওরে কলিজার সন্তানেরা।’ অভিনেত্রী পারভীন পারু লিখেছেন, ‘উফফফ, বুকের ভেতর বাতাস বন্ধ হয়ে যায়, চোখের পানি শুকায় না, আহ সন্তান আগুনে পোড়া ছোট পাখিগুলো! ওরা তো পাপ করার বয়সেও পৌঁছাতে পারেনি।’ সংগীতশিল্পী অন্তু দাস লিখেছেন, ‘ফুলগুলো ছিল আমাদের।’