‘জাতীয় শিক্ষাক্রম নতুন রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পর্যায়ে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রম এবং কিছু অংশের মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন।
রূপরেখা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লেতে শিশুদের জন্য এখন আর কোনো বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরাই তাদের সরাসরি শেখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তিনটি বই পড়ানো হবে, কিন্তু কোনো পরীক্ষা থাকবে না। বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিখন কার্যক্রম ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ থেকে শ্রেণিভেদে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং পরীক্ষা হবে অবশিষ্ট অংশে। তবে বেশকিছু বিষয়ের মূল্যায়ন শতভাগ ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন।
এ প্রসঙ্গে মতামত লিখেছেন বাংলাদেশ পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কক্সবাজার , (বিসিএস পুলিশ) মাঈন উদ্দিন চৌধুরী। তার লেখাটি আমাদের পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
” স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে স্মরণশক্তির পাশাপাশি মেধা শক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে উঠবে না। “
চোখ দিয়ে স্ক্যান করে পরীক্ষার হলে সাদা খাতায় কালো কালি দিয়ে মুক্তোঝরানো রচনা লিখে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বোর্ড স্ট্যান্ড করার সংস্কৃতির বন্দীদশা থেকে অবশেষে মুক্ত হতে পেরেছি । কিন্তু আফসোস যদি আমি পেতাম এই শিক্ষা পদ্ধতি..!
স্মরণশক্তি ও মেধা এক জিনিস নয়। কারো স্মরণশক্তি বেশি হওয়া মানে এই নয় যে সে মেধাবী। স্বরণশক্তি বেশি হলে সে মেধাবী হতেও পারে নাও হতে পারে। যেমন, আইনস্টাইনের স্মরণশক্তি ছিলো খুব দুর্বল। আগের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিলো মুখস্ত নির্ভর তথা স্বরণশক্তির প্রতিযোগিতা।
মেধা হলো সম্পূর্ণভাবে মনের বিকাশ, মুক্তমনে নরম কচিমনে নতুনত্বের চাষাবাদ।মেধা মানুষের মনে নতুন নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি করে ,মানুষকে ভাবিয়ে তোলে, গবেষণামুখী করে তোলে। মেধাকে বিকশিত করার জন্য শিক্ষক ও পিতা-মাতার উৎসাহ ছোটবেলা থেকে প্রভাবক হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করে। শুধু মুখস্ত বিদ্যা নয় ,মেধার চর্চা অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম গবেষণায় নতুনত্ব সৃষ্টি করে নিয়ে আসবে খ্যাতিমান নোবেল পুরস্কার। মানবজাতির কল্যাণে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতি সাধনে বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাবে বহুদূর।
বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি আমার খুব পছন্দের। এটা নিয়ে কখনো সোশ্যালমিডিয়ায় কিছু লিখিনি , তবে যারা এই পদ্ধতি নিয়ে আমার সাথে আলাপ করতো কিংবা কম্পলেইন করতো তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করতাম। তবে বিতর্কিত বিষয়গুলো সংশোধন করা শ্রেয়। অফিস কিংবা বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায় এই পদ্ধতির সুফলগুলো আলোচনা করি। সনাতন যেই শিক্ষা পদ্ধতি সেটা অনেকের জন্য অনেক কষ্টের ছিলো।অনেকের নিকটে স্কুল ছিলো এক আতঙ্কের। এমনও ঘটনা দেখেছি গ্রামে মাস্টারের বেত্রাঘাতে স্কুল ছাত্রের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে ,কিংবা ক্লাসে প্রচন্ড বেত্রাঘাতে সেন্সলেস/বেহুশ হয়ে যেতে। অনেক মেধা বেতের আঘাতে চাপা পড়ে গেছে। অনেক মেধাবী বিকশিত না হয়ে বেত্রাঘাতে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। কারণ মেধা বিকাশের জন্য উৎসাহ কিংবা বন্ধুত্বসুলভ আচরণে চেয়ে মারামারি ভয়ভীতি হলো বিরাট প্রতিবন্ধকতা। সম্মানিত শিক্ষকদের দোষ দিচ্ছি না কারণ শিক্ষকগণও গড্ডলিকাপ্রবাহে/ অন্ধ অনুকরণে ছিলেন। পড়া না পারলে কঠিন বেত্রাঘাত ,যেই টিচার যত রাগী তার তত বেশি ব্যক্তিত্ব এগুলো ছিলো তৎকালীন সংস্কৃতি। হয়তো অনেকেই বলবেন বেত্রাঘাত ছিলো বলেই সামাজিক মূল্যবোধ ছিলো। আসলে মূল্যবোধও সংস্কৃতির একটা অংশ এবং এটা পরিবর্তিত হয়ে নতুন সংস্কৃতি নির্মাণ করে তা অনেকেই মেনে নিতে পারে না। একটা শিশুকে ভয়ভীতি,বেত্রাঘাত দিয়ে পাঠদান কত যে হিংস্রতা তা এখন বুঝি, উপলব্ধি করি।