মার এই লেখা পৃথিবী তথা মহাবিশ্বের পরিণতি সম্পর্কে হয়তো অনেকের চিন্তার জগৎ কিছুটা উন্মোচিত হবে,,, আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি কি হবে তা নির্ভর করছে আমাদের মহাবিশ্ব কোন অবস্থায় আছে তার উপর। যেমন ১।উন্মুক্ত অবস্থা ২। বদ্ধ অবস্থা ৩। সমতলিক অবস্থা। যদি মহাবিশ্ব সারাজীবন সম্প্রসারিত হয় তাহলে তা উন্মুক্ত অবস্থা। আর যদি একটা সময় পর তা সংকুচিত হতে থাকে তাহলে তা বদ্ধ অবস্থা। এই দুই অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থা সমতলীয় অবস্থা। এই তিনটি অবস্থা নির্ভর করে মহাকর্ষীয় ঘনত্ব (¢) ওমেগা ‘র মানের উপর। ওমেগার সীমান্তিক মান হলো =১। ওমেগা হলো মহাকর্ষীয় বস্তুগত ঘনত্ব ও ক্রান্তি ঘনত্বের অনুপাত। ক্রান্তি ঘনত্ব বলতে মূলত যে ঘনত্বসম্পন্ন হওয়ার পর সম্প্রসারণকে বাধা দিয়ে সংকুচিত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত হয় সেই মান। বদ্ধ মহাবিশ্ব একদিন বিশাল সময় ব্যাবধানে একটি বিন্দুতে পর্যবসিত হবে। আবার সম্প্রসারিত মহাবিশ্ব তাপীয় মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যাই হোক, এই অনুপাত বা ওমেগার মান যদি ১ এর চেয়ে বড় হলে তা সম্প্রসারিত মহাবিশ্ব, ১এর চেয়ে কম হলে বদ্ধ মহাবিশ্ব। আর ১এর সমান হলে তা সমতলীয় মহাবিশ্ব। দৃশ্যমান গ্যালাক্সির ভর যোগ করে তাকে পর্যবেক্ষিত স্থানের আয়তন দিয়ে ভাগ করলে মহাবিশ্বের একটা গড় ঘনত্ব পাওয়া যায়য় । এভাবে হিসেব করে ঘনত্বের যে মান পাওয়া গেছে তা খুব কম; ক্রান্তি ঘনত্বের শতকরা ১ ভাগ মাত্র। এর বাইরে গ্যাস ট্যাস মিলিয়ে অন্যান্য চেনা জানা পদার্থ নিয়ে হিসেব করেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সেটা শতকরা ৪ ভাগের বেশি হয় না। অর্থাৎ আমাদের দৃশ্যমান যে জগত আমরা দেখি সেটা মহাবিশ্বের সামগ্রিক ভরের মাত্র ৪ ভাগ। তার মানে এই যে এই মান সঠিক হলে ওমেগার মান দাড়ায় ১ এর অনেক অনেক কম। তাহলে আমাদের সামনে চলে আসলো সেই উন্মুক্ত বা অনন্ত মহাবিশ্বের মডেল। তার মানে কি এই যে, মহাশূন্য কেবল প্রসারিত হতেই থাকবে? মহাবিশ্বের উপর মহাকর্ষ বল যদি ক্রিয়াশীল থাকে, তবে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের প্রসারণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে । মহাবিশ্বের মোট শক্তি তার মহাকর্ষের ক্রমশ প্রসারণকে কাছে টেনে আনবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে হয় বদ্ধ না হয় সমতলীয় হবে। সংকোচন নিঃশেষ না হয়ে আবার যদি প্রসারিত হয়ে আবার সংকোচন, এই অবস্থা চলতে থাকলে তা বাউন্স ইউনিভার্স এর মতো মনে হবে, কিন্তু তার পরিণতি কি হবে তাও অজানা। তাপ বাড়লে যেকোনো প্রসারণ বেড়ে যায় ঠিক আছে, কিন্তু এই তাপ বাহির থেকে আগত কোন তাপ নয়, কারণ এই ইউনিভার্স এর বাহিরে বের হয়ে কেউ একজন তাপ দিয়ে মহাবিশ্বকে গরম করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে ফাটিয়ে দিবে বিষয়টা তেমন নয়, ইউনিভার্স এর বাহিরে যাওয়ার তো সুযোগ নেই, যদি বাহিরে যাওয়া যায় সেটাও মহাবিশ্বের অন্তর্ভুক্ত কোনো প্লেস,, যাহোক, এই তাপ হলো মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত তাপ,, যা গ্যালাক্সি সমূহে ক্রমাগত বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন হয়, এই তাপ সামগ্রিক মহাবিশ্বের তুলনায় নগন্য, এটা দিয়ে বাড়ানো কিংবা ফাটানো সম্ভব না,, আসলে এটা একটা রুদ্ধতাপীয় প্রসারণ মাত্র, সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় আয়তন স্থির থাকে, আর রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় যেটা স্থির থাকে তা হলো এন্ট্রপি, যেহেতু এটা একটি রুদ্ধতাপীয় প্রসারণ এবং এন্ট্রপি অপরিবর্তিত থাকে তাই একসমশ সকল কিছুর তাপমাত্রা একই হয়ে যাবে এবং মহাবিশ্বের বিনাশ ঘটবে,, তাহলে এই সম্প্রসারিত কিংবা সমতলীয় কিংবস বদ্ধ মহাবিশ্ব তত্ত্ব কোনটাই সত্য হবে না, অথচ এই তিন তত্ত্বের যেকোনো একটি এই মহাবিশ্বের পরিণতি হবে যা তাপীয় মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যে কোনটি সঠিক,? আর ক্রান্তি ঘনত্ব হলো ঐ ঘনত্ব যে অবস্থায় সম্প্রসারণ না হয়ে সংকোচন হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে, মনে রাখতে হবে ঘনত্ব মানে হলে মহাবিশ্বের সামগ্রিক ভরকে তার সামগ্রিক আয়তনের ভাগফল,, এটা পরিবর্তনশীল,, ক্রান্তি ঘনত্ব এখনো শুরু হয়নি, হয়তোবা সামনে হবে,, তখন সংকোচন শুরু হবে,, প্রসারণ হতে এই ক্রান্তিলগ্নে সংকোচন হওয়ার সময়টুকু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে কয়েক সেকেন্ড অথচ এটা কয়েক হাজার কোটি বছরও হতে পারে,, এগুলো হিসাব নিকাশ ও কল্পনা করলে মাথা ঘুরিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং মহান আল্লাহর এই সৃষ্টি নিয়ে অবাক না হয়ে কোনো উপায় নেই,, যেহেতু প্রসারণের সর্বোচ্চ স্তরে ক্রান্তি ঘনত্বের মান পাওয়া যায় তা সর্বোচ্চ হবে এটাই স্বাভাবিক, আর মহাবিশ্বের নরমাল ঘনত্ব তখন ক্রান্তি ঘনত্বের চেয়ে কম, এই দুটোর ভাগফল অবশ্যই এক এর চেয় কম হবে, কারণ বড় জিনিস দিয়ে ছোট জিনিসকে ভাগ করলে ভাগফল এক এর চেয়ে ছোট অথ্যাৎ দশমিক হবে, আর একের চেয়ে ছোট হলে এই মহাবিশ্বের পরিণতি হবে ক্লোজ ইউনিভার্স,, আর ক্লোজ মহাবিশ্বও অনন্ত সময় ধরে জাম্পিং করবে যেটা শেষ হবার নয়া, অথ্যাৎ সময়ের মৃত্যু নেই, তবে মহাবিশ্বের সময় ও মহা অনন্ত কালের সময় দুটো ভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামো, একটি দুনিয়া ও অপরটি আখেরাতের অনন্তকাল,,, প্রকৃত পক্ষে এইসব কিছু এখনো রহস্যে ভরা। আপনারা হয়তো ভাবছেন, পুলিশ মানুষ রাত জেগে এগুলি কি লিখছেন। আসলে এই লেখার মা্ধ্যমে ঘুম আনার চেষ্টা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমোলজি,কোয়ান্টাম মেকানিকস, রিলিটিভিটি কে মনে পড়ছে খুব। যাই হোক উপরের লিখাগুলিতে হয়তো অনেকেই ইন্টারেস্ট পাবেনা। এগুলি পড়তে বা বুঝতে হলে আপনি গ্রহ,নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার, শ্বেত বামণ নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোল ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহী হতে হবে। প্রাণের অস্তিত্ব কেমন হবে তখন? একসময় তো প্রোটনগুলিও ভেঙ্গে নতুন মৌল তৈরি করে সময়ের ব্যবধানে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। গ্যালাক্সির সকল নক্ষত্র মরে গিয়ে অনেক সময় পরে আবার বিকিরিত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর যদি close universe হয় তাহলে বিগ ব্যাং এর উল্টো অবস্থানে গিয়ে হাজির হবে। তখন ঘনত্ব বাড়তে থাকবে, অনেক তাপ ও অন্তর্নিহিত শক্তি উৎপাদিত হবে। হয়তো আবার বিস্ফারণ ঘটবে। এইভাবে একটি bound universe এ একবার বিস্ফোরণ হবে আবার সংকুচিত হবে , মহাকালের আবহে এইরকম ঘটনা শুধুই ঘটতেই থাকবে। এটাকে Jumping Condition of Universe বলে। এই অবস্থা কতকাল ধরে চলবে তাও অজানা। Ultimate fate নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে যে, এইরকম ক্লোজ ইউনিভার্সে আলোকরশ্মিগুচ্ছ পরষ্পরকে ছেদ করে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সময়-স্থান নিয়ে আলোচনায় সময় ও স্থান দুটই অফুরন্ত,যেন শেষ হবার নয়। এখান থেকেই বুঝা যায়,হায়াতে দুনিয়া ও হায়াতে জিন্দেগি নামের শব্দগুলির সত্যতা প্রমাণিত হয়। স্বর্গ্য নরকের অঅস্তিত্বশীলতা কি এই আসীম সময়কাল নির্দেশ করে না..?
লেখক পরিচিতিঃ মাঈন উদ্দিন চৌধুরী অতিরিক্ত এসপি, বিসিএস(পুলিশ) ক্যাডার। বিএসসি (অনার্স), এমএস গণিত বিভাগ , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গণিত ও ভৌত বিজ্ঞানে মেজর কোর্স এস্ট্রোনমি এবং কসমোলজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।