ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দটি পুর্ববর্তী বৈষম্যবাদী মহাজোটের (সরকারের) কলংকজনক আবিষ্কার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আহ্বান ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী শব্দটি বিলোপ করা
হোক। আমাদেরকে আর ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় চাপিয়ে দেবেন না। এটা অন্যায়। আমাদের সঙ্গে
এটা পুর্ববর্তী সরকারের নির্মম রসিকতা। আজও আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের
মুখে শুনতে পাচ্ছি আমাদের ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। আমাদের ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী আখ্যায়িত
করা হচ্ছে।
আমরা প্রত্যেকেই জাতি। আমাদের ইতিহাস আছে। ভাষা আছে। বর্ণমালা আছে। সংস্কৃতি আছে। ।
ঐতিহ্য আছে। প্রথা আছে- কৃষ্টি আছে। নিজস্ব পোশাক আছে। নিজস্ব আধ্যাত্মিক বিশ্বাস আছে। রাজ্য
শাসনের গৌরবময় ইতিহাস আছে। সাহিত্য আছে। কবিতা-গল্প- গান, রূপকথা-উপকথা আছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পুর্ব থেকেই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বকীয়-স্বাতন্ত্র্য জাতিগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে বসবাস
করে এসেছি।
সংবিধানে ইন্ডিজিনাস পিপলস্ শব্দটি প্রতিস্থাপন পুর্বক ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী, উপজাতিসহ সবধরণের
আপত্তিজনক শব্দগুলো বিলুপ্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। একইসাথে বৈষম্যমুলক
সবধরণের কার্যক্রম, বিভক্তিমুলক সরকারি নীতি পরিবর্তন করা হোক। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি
সংঘাত বন্ধ করার জন্য আজ থেকেই কার্যক্রম শুরু করা হোক।
সংঘাত, হানাহানি, রক্তপাত, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায়
কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করলে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
মাধ্যমে গঠিত সরকার আরেকটি নোবেল পুরষ্কার লাভ করবেন সেটা অতি অবশ্যই জোরালো ভাবে বলা
যায়।
আমাদের বিশ্বাস নবগঠিত এই সরকার সেটা অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন। এই সরকার যদি
বাংলাদেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জনগণের
জীবন মান উন্নয়ন,মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে পারে তবে দীর্ঘ সময় এই সরকারকেই আমরা রাষ্ট্র
পরিচালনায় দেখতে চাইব। বর্তমান বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আমাদের এই কথাটি সমর্থন
করবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মনোনীত উপদেষ্টা বাবু সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষা, দারিদ্র্য
বিমোচন-আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্ত নের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় পরিবেশ
সংরক্ষণ,, বনসৃজন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখবেন বলে
আমরা আশা করব।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাধাগুলো চিহ্নিতকরণ পুর্বক রোডম্যাপ তৈরি করে দ্রুত চুক্তি
বাস্তবায়নে মনোযোগী হলে শান্তি ও অগ্রগতির পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। অন্ধকার পার্বত্যবাসীর
জীবনে আশার আলো ফুটে উঠবে। পার্বত্য চুক্তি সাক্ষর করে শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার লাভ
করেছেন। চুক্তিটি পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করলে ড. ইউনুস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অর্ন্তবর্তীকালীন
সরকার অবশ্যই নোবেল পুরষ্কারের দাবিদার হতে পারবেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পৃথিবীর নানান দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে যে
কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে চলেছেন তা দেখে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। তাদের
সুনামকে নিজেদের সুনাম হিসেবে যাতে দেখতে না পারি সেজন্য বিশাল একটা দেয়াল বা প্রাচীর নির্মাণ
করে রেখেছিল পুর্ববর্তী সকল সরকার ও শাসক গোষ্ঠীগুলো। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে পার্বত্যবাসীর
মুখোমুখি দাড় করানো হয়েছে। তাদের দিয়ে যুগের পর যুগ আমাদের ওপর নিপীড়ন করা হয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনে আমাদের প্রতি গভীর দরদ আছে।
সবাই মিলে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম- তথা সমগ্র বাংলাদেশকে একটি শান্তিপুর্ণ ও নিরাপদ আবাসস্থল
হিসেবে গড়তে পারি। আমরা হতে পারি সেই দেশটির গর্বিত নাগরিক। সমৃদ্ধ দেশ ও মর্যাদাবান জাতি
হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের পরিচিতি সগৌরবে তুলে ধরতে পারব।