21স্বাভাবিক অবস্থায় একজন ব্যক্তি নফল হজ করবে, নাকি ওই টাকা দান-খায়রাত করা তার জন্য উত্তম, এটি আপেক্ষিক বিষয়। যাদের আল্লাহতায়ালা অনেক ধন-সম্পদের নেয়ামত দান করেছেন তারা দুটি কাজ সমন্বয় করেই করতে পারেন। তিনি ফরজ-ওয়াজিব সদকা আদায়ের পাশাপাশি নফল দান-খায়রাতও করবেন এবং মাঝে মাঝে নফল হজ-ওমরাহতেও যাবেন। দুটি নেক কাজের মাঝে সাংঘর্ষিক ভাব তৈরির দরকার নেই। কারণ এ কাজগুলো একটি করলে আরেকটি করা যাবে না এমন নয়।
মনে রাখা দরকার, নফল হজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কেননা হজের মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় অর্থ ব্যয় এবং সফরের কষ্ট স্বীকার করে আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্য দিয়ে নিজের ইমানি শক্তিবৃদ্ধি, দুটোই রয়েছে। তা ছাড়া হজে রয়েছে আত্মিক ও নৈতিক বহুবিধ উপকার। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং প্রতিটি শীর্ণকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে। যেগুলো আসবে বহু দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যেন তারা পরিদর্শন করে এমন সব বিষয় ও স্থান, যাতে রয়েছে তাদের প্রভূত কল্যাণ…।’ (সুরা হজ : ২৭-২৮)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিমকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান। বলা হলো, তারপর কোনটি? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। বলা হলো, তারপর? বললেন, মাবরুর হজ। (সহিহ বোখারি : ১৫১৯)
অন্য হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়। আর মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (সহিহ বোখারি : ১৭৭৩)
তাবেয়ি হজরত তাউসকে (রহ.) জিজ্ঞেস করা হলো নফল হজ উত্তম, নাকি দান-সদকা? তিনি উত্তর দিলেন, সফরের কষ্ট, নির্ঘুম রাতযাপনের কষ্ট, দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট, বায়তুল্লাহর তওয়াফ, বায়তুল্লাহর সামনে নামাজ, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান এবং কংকর নিক্ষেপ (এসব তো সদকায় আর পাওয়া যায় না)। অর্থাৎ তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন, হজই উত্তম। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৮৮২২)
মুহাম্মদ ইবনে আব্বাদ বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজের জন্য অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর রাস্তায় খরচের সমতুল্য। এতে এক দিরহামের বিনিময়ে সাতশ দিরহামের সওয়াব অর্জিত হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১২৮০৩)
এসব হাদিস ও বক্তব্য থেকে নফল হজের অধিক গুরুত্বের দিকটিই প্রমাণিত হয়। অবশ্য কখনো কখনো নফল হজের চেয়ে দান-সদকার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন : মুসান্নাফে আবদুর রাজজাকে আছে, সুফিয়ান সাওরি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তাকে এক লোক জিজ্ঞেস করল, নফল হজ উত্তম নাকি দান-সদকা? তিনি তখন ইবরাহিম নাখয়ির সূত্রে বললেন, যদি একাধিক হজ করে থাকে তাহলে সদকা। আর হাসান (রহ.) বলতেন, যদি একবার হজ করে থাকে (তাহলেও সদকাই উত্তম)। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক : ৮৮২৩)
এর ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, এটা সাধারণ দান-সদকার বেলায় নয়; বরং বিশেষ ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনার এমন কোনো দুস্থ অভাবী আত্মীয় থাকে, যাকে দেখার কেউ নেই, বা দেশে যদি কোনো জাতীয় দুর্যোগ অথবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কোনো চাহিদা সামনে এসে দাঁড়ায়, যেখানে একার চেষ্টায় বা মুষ্টিমেয় লোকের অর্থায়ন যথেষ্ট নয়; বরং বহু মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়ে, তাহলে এসব ক্ষেত্রে সংগৃহীত অর্থ দান করে দেওয়াকে তারা নফল হজের চেয়ে উত্তম গণ্য করেছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি নফল হজে গিয়েও অতিরিক্ত দান-খয়রাত করার সামর্থ্য রাখে সে উভয়টিই করবে।
মাওলানা আবদুল জাব্বার