43ওমরাহ এমন একটি ইবাদাত, যা সব সময় করা হয় না, তাই এর মাসআলাগুলো মানুষের কাছে স্পষ্ট থাকে না, ফলে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়। এখানে এমন কিছু ভুলভ্রান্তি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
ইহরাম বাঁধার ক্ষেত্রে যেসব ভুল হয়
অনেকে মনে করেন, ইহরামের কাপড় পরে নামাজ পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়, এই ধারণা ভুল। বরং নিয়তের পর অবশ্যই তালবিয়া (অর্থাৎ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) পড়তে হবে, ইহরাম সম্পন্ন হওয়ার জন্য নিয়ত ও তালবিয়া দুটিই জরুরি।
কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করে ভাবেন, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে, বিমান যেহেতু জেদ্দায় অবতরণ করবে, তাই জেদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করেন। অথচ মিকাতের বাইরের হজযাত্রীদের জন্য ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা জায়েজ নেই।
ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না মনে করা : কেউ কেউ মনে করেন, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে, সেই কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন্ত বদলানো যাবে না, এটা একটা ভুল ধারণা, ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে।
তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইজতিবা করা : অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইজতিবা (বাঁ কাঁধের ওপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকেন এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকাকে ইসলামের বিধান মনে করেন, এটি ভুল। এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরুহ হবে, সব তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়; বরং যে তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয়, শুধু সেই তাওয়াফেই ইজতিবা করতে হয়। অতএব নফল তাওয়াফে ইজতিবা নেই।
ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিযুক্ত বায়তুল্লাহ স্পর্শ করা : বায়তুল্লাহর দেয়াল ও গিলাফে নিচ থেকে সাত-আট ফুট পরিমাণ চারদিকেই সুগন্ধি লাগানো থাকে, তাই যেকোনো অংশে হাত লাগানোর দ্বারা হাতে সুগন্ধি লেগে যায়, যা ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ।
বায়তুল্লাহর যত্রতত্র চুম্বন, স্পর্শ ও আলিঙ্গন করা : হজরত রাসুল (সা.) ও সাহাবা-তাবেঈন থেকে কেবল সীমিত কিছু স্থান স্পর্শ করা আর কিছু ক্ষেত্রে চুমু খাওয়ার কথা বর্ণিত আছে। যেমন : হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করা, চুমু খাওয়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তেমনি বায়তুল্লাহর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ রুকনে ইয়ামানিতে ডান হাত বা উভয় হাত দ্বারা স্পর্শ করা সুন্নত। কেউ কেউ চুমু খাওয়ার কথাও বলেছেন এবং মুলতাজাম, যেটি হাজরে আসওয়াদ থেকে বায়তুল্লাহর দরজা পর্যন্ত স্থান, এখানে সিনা, গাল ও উভয় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে দোয়া করার কথা হাদিসে বর্ণিত আছে। কাবাঘরের দরজার চৌকাঠ ধরা এবং দোয়া করার কথাও হাদিসে আছে, এর বাইরে কোথাও স্পর্শ করার কথা নেই।
তাওয়াফে নির্দিষ্ট দোয়াকে জরুরি মনে করা : অনেকে তাওয়াফের প্রতি চক্করের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট দোয়া পড়াকে জরুরি মনে করেন। তাওয়াফ অবস্থায় নির্দিষ্ট দোয়া পড়া জরুরি নয়। রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাহ…’ এই দোয়া পড়া উত্তম। এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ ছাড়া পুরো তাওয়াফে কোরআন-হাদিস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পড়া যেতে পারে। তেমনিভাবে অন্য যেকোনো ভালো অর্থবোধক দোয়াও পড়া যেতে পারে। দোয়া আরবিতে করাও জরুরি নয়। নিজের ভাষায় করা যেতে পারে।
জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করা : অনেকে জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করেন এবং জামাতের মধ্যে একজন মুখস্থ বা দেখে দেখে উঁচু আওয়াজে দোয়া পড়েন আর তার সঙ্গে পুরো জামাত সমস্বরে দোয়া পড়তে থাকেন, এটা ঠিক নয়।
তাওয়াফ অবস্থায় কাবা শরিফের দিকে বুক ফেরানো : তাওয়াফকারী পুরো তাওয়াফ অবস্থায় বায়তুল্লাহকে বাঁ পাশে রেখে চলবেন, শুধু রুকনে ইয়ামানি ছোঁয়ার সময় (যদি ছোঁয়া সম্ভব হয়) যেহেতু উভয় হাত কিংবা ডান হাতে বায়তুল্লাহ স্পর্শ করতে হবে, তাই তখন বায়তুল্লাহর দিকে সিনা ফেরানো যাবে, কিন্তু সিনা বায়তুল্লাহর দিকে করলে ওই স্থান থেকেই আবার বায়তুল্লাহ বাঁ দিকে রেখে তাওয়াফ শুরু করতে হবে, তারপর হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়ে আবার সেদিকে ফিরবেন।
নফল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ না পড়া বা বিলম্বে পড়া : অনেককে দেখা যায়, একের পর এক নফল তাওয়াফ করতেই থাকেন, একটি তওয়াফ শেষ হলে তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ পড়েন না। অথচ ফরজ ও ওয়াজিব তাওয়াফের মতো নফল তাওয়াফের পরও দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব এবং বিনা ওজরে একাধিক তাওয়াফের নামাজকে একত্রে পড়া মাকরুহ।
মাকামে ইবরাহিমকে পেছনে রেখে নামাজ পড়া : এ দুই রাকাত নামাজ মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে পড়া সুন্নত। কিন্তু অনেককে দেখা যায়, মাকামে ইবরাহিমকে পেছনে রেখে মাকামে ইবরাহিম ও বায়তুল্লাহর মাঝের ফাঁকা জায়গায় নামাজ পড়েন, এতে সেই সুন্নত আদায় হয় না।
মাওলানা আহসান আমিন