আল্লাহ তাআলা আমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেননি। তিনি বিশেষ লক্ষ্য দিয়ে আমাদের এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে কি তোমরা মনে করেছিলে যে আমি তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না!’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১১৫)
অহেতুক কাজ করা এবং অহেতুক কাজে জড়ানোর কারণে আমাদের জীবনে অনেক সর্বনাশ ঘটে, যা আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে বহুদূরে ঠেলে দেয়। আর যারা নিজেকে অহেতুক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে তারা প্রকারান্তে এর মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
নিজের ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে। নিজের জীবনে যে প্রতিভা রয়েছে তার বিকাশ ঘটাতে পারে না, বরং প্রতিভার অপমৃত্যু হয়। এসব অহেতুক কাজ দ্বারা অন্তর কঠিন হয়ে যায়, রিজিকের রাস্তাও সংকীর্ণ হয়ে যায়। মারুফ কারখি (রহ.) বলেন, অহেতুক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
(জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৩১৭)
লুকমান হাকিম (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি না অমুক গোত্রের একজন দাস ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি না অমুক পাহাড়ের পাদদেশে ছাগল চরাতেন? জবাব দিলেন, তাই করতাম। তারপর জিজ্ঞেস করা হলো, কিসের কারণে আপনি এত বড় সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হলেন। লুকমান হাকিম বললেন, ‘সত্য কথা বলা, আমানতদারিতা এবং অনর্থক কাজ পরিহার করার কারণে।
’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৮৫৮)
অনর্থক কাজ পরিহার ইসলামের সৌন্দর্য
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কাজ পরিহার করা। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)
এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান হাদিস। দ্বিনি আদব-কায়দা ও চাল-চলন সম্পর্কে এর দ্বারা একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেছেন, একজন মানুষ পরিপূর্ণ মুমিন তখনই হবে যখন সে জিনিস বর্জন করে। আবার কেউ বলেছেন, যখন কারো ইসলামটা সুন্দর হয় তখন সে অহেতুক জিনিস বর্জন করে।
তাই যার ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, সে অনর্থক সব কথা ও কাজ পরিহার করে চলে।
কোনটা প্রয়োজনীয় এবং কোনটা অপ্রয়োজনীয়, তা কিভাবে বোঝা যাবে? এটা বোঝা খুব সহজ। মানুষের সব কথা ও কাজের সম্পর্ক হয়তো পার্থিব জীবনের সঙ্গে হবে, নয়তো আখিরাতের সঙ্গে। যখনই কোনো কথা বলা হয় বা কোনো কাজ করা হয়, দেখতে হবে এটা না করলে পার্থিব জীবনের বা পরকালীন জীবনের কোনো ক্ষতি আছে কি না। যদি দেখা যায় ক্ষতি নেই, তবে মনে করতে হবে সেটাই অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়।
অহেতুক ভিডিও বানানো, ভিডিও দেখা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজ হওয়ার কারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বিভিন্ন ভিডিও বানায়, তারা এগুলো উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভিউ বেশি পাওয়ার জন্য কেউ কেউ উদ্ভট ও শরিয়ত পরিপন্থী কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে, যা জঘন্য হারাম কাজ। এসব ভিডিওর মাধ্যমে অনেক তরুণ প্রচুর সময় নষ্ট করছে। অথচ যৌবনের এই সময়গুলো আমাদের জন্য অনেক দামি। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব কিয়ামতের দিন দিতে হবে। হাশরের ময়দানে যখন হিসাব-নিকাশের জন্য সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তাদেরকে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে—তার মধ্যে বিশেষ পাঁচটির কথা এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো তার যৌবন। তার যৌবন সে কী কাজে ক্ষয় করেছ? আল্লাহ প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করবেন সে তার সীমিত যৌবন আল্লাহর আনুগত্যের কাজে খরচ করেছে, নাকি তাঁর অবাধ্যতায়। এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেউ নড়তে পারবে না। যেগুলো আল্লাহর জিকর থেকে মানুষকে গাফেল রাখে।
অহেতুক সন্দেহ
অহেতুক সন্দেহের কারণে কত সম্পর্ক যে নষ্ট হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি খারাপ ধারণা করে পরবর্তী সময়ে লজ্জিত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’(সুরা : আল-হুজুরাত, আয়াত : ৬)
শেষ কথা, নিজের দ্বারা অহেতুক কথা ও কাজ হতে দেখলে মনে করবে—নিজের ভেতর এখনো ইসলামী সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটেনি।